যুক্তরাষ্ট্র একযোগে উত্তর কোরিয়া ও মিয়ানমারের ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মূলত দুই দেশের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র বাণিজ্য নেটওয়ার্কের কারণে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়াশিংটন। এতে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে দুই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এবং পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জাম কেনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই লেনদেনকে কেন্দ্র করেই মূলত নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত আসে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, এই অস্ত্র বাণিজ্য নেটওয়ার্ক শুধু অবৈধই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য সরাসরি হুমকি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্র কেনাবেচার পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করত মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত রয়্যাল শুন লেই কোম্পানি লিমিটেড এবং উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোরিয়া মাইনিং ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিং কর্পোরেশন (কোমিড)। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে রয়্যাল শুন লেই-এর পরিচালক অউং কো কো উ, দুই শীর্ষ কর্মকর্তা কিয়াও থু মিয়ো মিন্ত এবং তিন মিও অউং-কে। অপরদিকে, কোমিডের উপপরিচালক কিম ইয়ং জু ও কর্মকর্তা ন্যাম চোল উং-এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, অস্ত্রের অর্ডার নেওয়া, চালান পাঠানো এবং অস্ত্র বিক্রির অর্থ উত্তর কোরিয়ার সরকার ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা ফরেন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করতেন কোমিডের এই দুই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার এই গোয়েন্দা সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই কয়েক বছর আগে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জন হার্লে এই বিষয়ে বলেন, “উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র উৎপাদন ও বাণিজ্য নেটওয়ার্ক অবৈধ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের জন্য সরাসরি হুমকি।”
ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া জানতে উত্তর কোরিয়ার জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। তবে উত্তর কোরিয়া কিংবা মিয়ানমারের কোনো কর্মকর্তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু উত্তর কোরিয়া ও মিয়ানমারকেই নয়, বরং তাদের সঙ্গে যুক্ত বৈশ্বিক অস্ত্র বাণিজ্য নেটওয়ার্ককেও চাপের মধ্যে ফেলবে। এতে কোরীয় উপদ্বীপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নতুন করে আলোচনায় আসবে।
তথ্যসূত্র : রয়টার্স