আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের তিনটি নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের যথাসম্ভব দায়িত্ব দেওয়া থেকে বিরত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০ হাজার সেনা মোতায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

রোববার (১২ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। উপদেষ্টা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে একটি একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্ত বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সুষ্ঠু ভোটপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে যেকোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি কেন্দ্রে ১৩ জন হারে আনুমানিক ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য মোট ৫ লাখ ৮৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার জনকে অস্ত্রসহ ও নিরস্ত্র ৪ লাখ ৫০ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইনবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বডি ওর্ন ক্যামেরা সরবরাহ করা হচ্ছে।’

তিনি জানান, প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ২৮ ব্যাচে তিন দিন মেয়াদি এ প্রশিক্ষণ দেশজুড়ে ১৩০ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুটি ব্যাচের ১৩ হাজার সদস্য প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়া, এবারের নির্বাচনে আনসার-ভিডিপির ৫ লাখ ৮৫ হাজার সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে—এর মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার অস্ত্রসহ ও ৪ লাখ ৫০ হাজার নিরস্ত্র সদস্য। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে। আনসার ব্যাটালিয়নের ৩ হাজার ১৫৭ সদস্য নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, বিজিবির ১ হাজার ১০০ প্লাটুনে প্রায় ৩৩ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন, যাদের ৬০ শতাংশ ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি প্রশিক্ষণ শেষ হবে। এছাড়া, নির্বাচনে প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল আগের তুলনায় অনেক কমেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন শান্ত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আছে। শারদীয় দুর্গাপূজা বিঘ্নিত করার জন্য কিছু ফ্যাসিস্ট ও তাদের প্ররোচনায় থাকা বুদ্ধিজীবীরা ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেছিল, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয়েছে।’