ময়মনসিংহ সদরে অচেনা একটি প্রাণীকে খাঁচায় আটকে রাখা হয়েছে। প্রাণীটি দেখতে বিড়ালের আকৃতির হলেও গায়ে কিছুটা ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। বড় বড় কালচে চোখ আর ডোরাকাটা লম্বা লেজ। সামনের পা দুটি কালো। দেখতে বেশ হিংস্র। অপরিচিত এ প্রাণীটি দেখতে ভিড় জমিয়েছে মানুষ।
বুধবার বেলা ১১টা থেকে এ প্রাণীটিকে আটক করে রেখেছে সদর উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামের মানুষজন। তবে দিন পেরিয়ে রাত হলেও প্রাণীটি উদ্ধারে ঘটনাস্থলে যায়নি বন বিভাগের কেউ।
মাইজহাটি গ্রামের লুৎফুর রহমান বলেন, দুপুর ১২টার দিকে হাবিবুর রহমান নামে একজনের বাড়ির পরিত্যক্ত মালামাল রাখার ঘরে ঘাপটি মেরে থাকা অচেনা প্রাণীটি দেখতে পায় এক শিশু। ভয় পেয়ে সে পরিবারের অন্যদের জানালে লাঠিসোটা ও জাল নিয়ে প্রাণীটিকে ধাওয়া করে এলাকাবাসী। পরে একপর্যায়ে এটিকে আটক করে খাঁচায় ভরা হয়।
তিনি বলেন, অনেকে প্রাণীটিকে পিটিয়ে মারতে চাইলেও আমরা বাঁধা দেই। কেননা এটি বিলুপ্ত কোনো প্রাণী হতে পারে। তাই এটিকে মেরে ফেলা ঠিক হবে না। সংশ্লিষ্ট সরকারি কেউ আমাদের কাছে আসলে, তাদের কাছে এটি হস্তান্তর করব।
এদিকে প্রাণীটির ছবি পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাহফুজুর রহমানকে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে পাঠালে তিনি এটিকে গন্ধগোকুল বলে দাবি করেছেন।
মাহফুজুর রহমান বলেন, গন্ধগোকুল এশীয় তাল খাটাশ, ভোন্দর, লেনজা ,সাইরেল বা গাছ খাটাশ নামে পরিচিত। তালের রস বা তাড়ি পান করে বলে তাড়ি বা টডি বিড়াল নামেও পরিচিত। গন্ধগোকুল বর্তমানে অরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। পুরোনো গাছ, বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে এই প্রাণীটি। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুলের বাস।
তিনি জানান, ফল, কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম, বাচ্চা, পাখি, ছোট প্রাণী, তালের রস, খেজুরের রস খায় এরা। অন্য খাদ্যের অভাব হলে মুরগি-কবুতর খায়। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে। এদের গা থেকে পোলাওয়ের চালের মতো গন্ধ আসে।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের ময়মনসিংহ সদর রেঞ্জের কর্মকর্তা মেজবাউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমরা লোক পাঠিয়ে প্রাণীটিকে উদ্ধার করে বনের মধ্যে ছেড়ে দিব। সাধারণত আমরা এটিই করি।