শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন ভাঙালেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার সহধর্মিণী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।
বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে অনশন ভেঙেছেন তারা। ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাসপাতাল থেকে এসে অনশন ভেঙেছেন অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও।
তবে শাবিপ্রবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকবে।
এর আগে ভোরে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার প্রস্তাব দেন। শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধে অনশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সিলেটে পৌঁছান অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন হক। রাত পৌনে ৪টায় ক্যাম্পাসে পৌঁছেই সরাসরি চলে যান অনশনস্থলে। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন।
শিক্ষার্থীরা পুরো ঘটনা খুলে বলার পর তিনি তাদের জানান, সরকারের কাছে আন্দোলনের সঠিক তথ্য নেই। তিনি সরকারের কাছে তাদের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরবেন।
এ সময় তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার প্রস্তাব দেন। শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধে অনশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষার্থীরা বাকি অনশনকারীদের হাসপাতাল থেকে অনশনস্থলে আনার জন্য সকাল ৮টা পর্যন্ত সময় চান।
এ সময় আন্দোলনে সহায়তার জন্য পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর গ্রেফতারের কথা শুনে জাফর ইকবাল আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে ১০ হাজার টাকার একটি খাম তুলে দিয়ে বলেন, এখন ওরা যেন তাকেও গ্রেফতার করে।
এ ছাড়া অনশনস্থলে চিকিৎসা সেবা তুলে নেওয়ার কথা শুনে ড. জাফর ইকবাল বলেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা অনশন করে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে, সেখান থেকে যারা চিকিৎসাসেবা প্রত্যাহার করেছে, তারা আসলে শিক্ষার্থীদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।
তিনি সরকারের ওপর মহলে এসব অভিযোগ তুলে ধরবেন বলে জানান। সকাল ৬টার দিকে অনশনস্থল ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীদের দেওয়া সময় অনুযায়ী সকাল ৮টায় আবারও অনশনস্থলে আসেন ড. জাফর দম্পতি। তবে তখনও হাসপাতাল থেকে বাকি ২০ অনশনকারী সেখানে পৌঁছাননি।
এদিকে আলোচনার পর আন্দোলনকারীদের মুখপত্র শাহরিয়ার আবেদিন জানান, জাফর স্যার, ম্যাডাম তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি সরকারকে বলবেন। তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে অনশন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান শাহরিয়ার আবেদিন। তবে উপাচার্য পদত্যাগের দাবিতে তাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
প্রসঙ্গত আন্দোলনে অর্থ জোগানের অভিযোগে শাবিপ্রবির সাবেক ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর রাতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর আগে ঢাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই ৫ জনকে সিলেট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
মামলার পর তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ।
গ্রেফতার সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন— হাবিবুর রহমান খান (২৬), রেজা নুর মুইন (৩১), এএফএম নাজমুল সাকিব (৩২), একেএম মারুফ হোসেন (২৭), ফয়সাল আহমেদ (২৭)।