শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ, ক্রিকেটারদের সঙ্গে বাংলাদেশের ভক্তরাও ছিলেন চিন্তিত। ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিধর দলের বিপক্ষে একটি জয় যেখানে আনন্দের ঢেউ তোলে, সেখানে দুই দিনে এলো দুই জয়! মঙ্গলবার প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের পর আজ (বুধবার) দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ৫ উইকেটে জিতে দুয়ে দুই হলো স্বাগতিকদের।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার ২০ ওভারে ৭ উইকেটে করা ১২১ রান ৮ বল আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় বাংলাদেশ। ফলে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটি জিতে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিকরা।

এই জয়ে বোলাররা তো বটেই, ব্যাটসম্যানদের অবদানও কম নয়। বিশেষ করে লোয়ার মিডল অর্ডার। তরুণ আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান প্রমাণ করলেন, তাদের দিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের অবিচ্ছিন্ন ৫৬ রানের জুটিতেই জয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। সাকিব আল হাসনের বিদায়ের পর শঙ্কা জন্মালেও এই দুই ব্যাটসম্যান মিলে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান দলকে।

যেখানে আফিফ দলীয় সর্বোচ্চ হার না মানা ৩৭ রান করেছেন ৩১ বল থেকে। ম্যাচ জেতানো ইনিংসটি তিনি সাজান ৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়। সোহান ২১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে অপরাজিত ছিলেন ২২ রানে। অবদান রেখেছেন সাকিব (১৭ বলে ২৬) ও শেখ মেহেদী হাসানও (২৪ বলে ২৩)।

অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ বোলার বাংলাদেশের হারানো ৫ উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। অর্থাৎ, একটি করে উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড, অ্যাশটন অ্যাগার, অ্যাডাম জাম্পা ও অ্যান্ড্রু টাই।

সৌম্যর ‘ডাক’ ও শুরুর চাপ

প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে আউট হয়েছেন। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পুষিয়ে দেওয়া সুযোগ ছিল সৌম্য সরকারের। কিন্তু আজ (বুধবার) আরও হতাশ করলেন বাঁহাতি ওপেনার। রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে গেছেন তিনি।

বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ১২১ রান করা অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ে দারুণ শুরুর প্রয়োজন ছিল। যেটি এনে দিলেন মিচেল মার্শ। বাঁহাতি পেসারের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন সৌম্য। মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই সাজঘরের পথ ধরেছেন এই ওপেনার।

সঙ্গীকে হারিয়ে নাঈম শেখও বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। জশ হ্যাজেলউডের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন বাঁহাতি ওপেনার।

২১ রান তুলতে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ‍চাপে বাংলাদেশ। হ্যাজেলউডের নিচু হয়ে আসা বলটি ঠিক বুঝতে পারেননি নাঈম। যে লেন্থে আসার কথা ছিল বলটি, সেভাবে ব্যাটে আসেনি। ফল, ব্যাট মিস করে বল সরাসরি আঘাত করে স্টাম্পে। দেখেশুনে শুরু করেও তাই নাঈম ১৩ বলে ৯ রানে করে আউট হয়ে গেছেন।

রিভিউয়ে রক্ষা এবং সাকিবের বিদায়

দুই ওপেনার বিদায় নিলে চাপ তৈরি হয় বাংলাদেশের ওপর। তবে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের চেপে ধরার সুযোগ দেননি সাকিব আল হাসান ও শেখ মেহেদী হাসান। তাদের ব্যাটে ভর করে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে আবারও ধাক্কা খেলো স্বাগতিকরা সাকিবের বিদায়ে।

অ্যাশটন অ্যাগারের এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার আউট দিয়েছিলেন সাকিবকে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যান। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্পে আঘাত করেনি। সেবার রক্ষা পেলেও ইনিংস বেশিদূর নিতে পারেননি সাকিব। ২৬ রান করে অ্যান্ড্রু টাইয়ের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন তিনি।

টাইয়ের অফ স্টাম্পের বাইরে বল খানিকটা ভেতরে ঢুকে যায়, সাকিব ব্যাট চালিয়েছিলেন। তবে বলে কানেক্ট করতে পারেননি। ফল, বল স্টাম্পে আঘাত করলে ফিরতে হয় প্যাভিলিয়নে। ১৭ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৪ বাউন্ডারিতে।

এ কোন মাহমুদউল্লাহ!

স্পিনের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন মাহমুদউল্লাহ। তাছাড়া চাপের মধ্যে সম্ভবত দেশের সেরা ব্যাটসম্যান তিনিই। আর খেলছেন যখন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিয়ে, তখন বাড়তি প্রত্যাশা তো তার ওপর থাকেই। কিন্তু হতাশ করলেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।

সাকিব আল হাসানের বিদায়ের পর ক্রিকেট তার অভিজ্ঞতার উপস্থিতি ভীষণ দরকার ছিল। কিন্তু পারলেন না মাহমুদউল্লাহ। চূড়ান্ত হতাশায় ডুবিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন স্বাগতিক অধিনায়ক। সবচেয়ে বড় বিষয় তার উইকেট হারানোর ধরন। অ্যাশটন অ্যাগারের অনেকটা বাইরের বল টেনে নিয়ে স্টাম্পে লাগিয়েছেন তিনি। মাত্র ৪ বল খেলা মাহমুদউল্লাহর দৃষ্টিকটু আউট খেলার পরিস্থিতি বিবেচনায় মোটেও মানানসই নয়।

বিপদ বাড়ান মেহেদী

রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন আফিফ হোসেন। তবে উইকেট হারানো আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ। ক্রিজ ছেড়ে শট খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান।

ভাগ্যও বলতে হবে মেহেদীর! বেশ কয়েকবার বেঁচে গিয়েছেন নো ম্যানস ল্যান্ডে বল পড়ায়। ব্যাটিং পজিশনে প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নেমে এই ব্যাটসম্যান মোটামুটি ক্রিজে মানিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। তবে অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেছেন।

অ্যাডাম জাম্পার বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে চাইলেও ব্যাটে লাগাতে পারেননি। সুযোগটা নষ্ট করেননি উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েড। ফেরার আগে মেহেদী ২৪ বলে এক ছক্কায় করে যান ২৩ রান।

আফিফ-সোহানের জুটি ও জয়

বাংলাদেশ যখন পঞ্চম উইকেট হারালো, জিততে তখনও দরকার ৫৫ রান। সংশয় তৈরি হলেও আফিফ-সোহান মিলে কোনও বিপদই আসতে দেননি। যষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫৬ রান যোগ করে নিশ্চিত করেন দলের জয়। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আফিফের হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কারও।

লক্ষ্য ছিল ১২২

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের বোলাররা চমৎকার বোলিং করলেন। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নিজেদের আওতার মধ্যেই রেখেছে বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমান-সাকিব আল হাসানদের বোলিংয়ের সামনে অস্ট্রেলিয়া নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে করে ১২১ রান।

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ করেছিল ১৩১ রান। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে ১২২ রানের লক্ষ্য কঠিন ছিল না। ব্যাটসম্যানদের জন্য সাধ্যের মধ্যেই ‍লক্ষ্য রেখেছিলেন বোলাররা। যার নেতৃত্বে ছিলেন মোস্তাফিজ। মিরপুরের উইকেট স্পিন বান্ধব বলা হলেও এই পেসার আলো ছড়িয়েছেন। ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট।

আরেক পেসার শরিফুল ইসলাম ৪ ওভারে ২৭ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। সাকিব ৪ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট পেলেও বেঁধে রেখেছিলেন সফরকারী ব্যাটসম্যানদের। মেহেদী হাসান ৩ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। আর আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নাসুম আহমেদ কোনও উইকেট পাননি। ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়েছেন।

তাদের চমৎকার বোলিংয়ের সামনে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেছেন মিচেল মার্শ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ রান মোয়েসেস হেনরিকসের। এছাড়া শেষ দিকে মিচেল স্টার্ক অপরাজিত ছিলেন ১৩ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১২১/৭ (মার্শ ৪৫, হেনরিকস ৩০, স্টার্ক ১৩, ক্যারি ১১, ফিলিপে ১০; মোস্তাফিজ ৩/২৩, শরিফুল ২/২৭)।

বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১২৩/৫ (আফিফ ৩৭*, সাকিব ২৬, মেহেদী ২৩, সোহান ২২*; অ্যাগার ১/১৭, হ্যাজেলউড ১/২১, জাম্পা ১/২৪, টাই ১/২৭, স্টার্ক ১/২৮)।

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা: আফিফ হোসেন।