মাত্র ৬২ রানে গুটিয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়া। শেষ টি-টোয়েন্টিতে আরও দিশেহারা সফরকারীরা। তাতে অজিদের সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জায় ডুবিয়ে সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ। বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ৬০ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতেই পারেননি। সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বোলিংয়ের সামনে ১৩.৪ ওভারে মাত্র ৬২ রানে অলআউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাই ১২২ রান করেও বাংলাদেশ পেয়েছে বড় জয়। অজিদের লজ্জায় ডুবিয়ে আগেই পাঁচ ম্যাচের সিরিজ নিশ্চিত করা বাংলাদেশ মিশন শেষ করলো ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে।

শেষ ১৪ রান তুলতে ৭ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের ওপর ঝড় বইয়ে দিয়েছেন সাইফউদ্দিন ও সাকিব। শুরুটা করেন সাইফউদ্দিন। তার জোড়া আঘাতের পর সাকিবের ঘূর্ণি জাদু শুরু। ৩.৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেওয়ার পথে অনন্য এক কীর্তিও গড়ে ফেলেন সাকিব। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১ হাজার রান ও ১০০ উইকেটের রেকর্ড গড়েন তিনি।

টিম কম্বিনেশন একটা কারণ ছিল। তাছাড়া উইনিং কম্বিনেশনের ব্যাপারও ছিল। তাই সাইফউদ্দিনের সুযোগ হয়নি। শেষ টি-টোয়েন্টিতে এসে সুযোগ পেয়েই নিজেকে চেনালেন এই পেসার। তার শিকার অ্যালেক্স ক্যারি (৩), মোয়েসেস হেনরিকস (৩) ও অ্যাশটন অ্যাগার (২)। সব মিলিয়ে ৩ ওভারে ১২ রান দিয়ে সাইফউদ্দিনের শিকার ৩ উইকেট।

তবে তাদের আগে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদ। ২ ওভারে ৮ রান দিয়ে তার শিকার ২ উইকেট। ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে আউট করার পর প্যাভিলিয়নের পথ দেখান ফর্মে থাকা মিচেল মার্শকে। বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে সর্বোচ্চ ২২ রানের ইনিংস খেলেন ম্যাথু ওয়েড। তিনি ছাড়া আর একজনই কেবল যেতে পেরেছেন দুই অঙ্কের ঘরে। বেন ম্যাকডারমট করেন ১৭ রান।

আগের ম্যাচে সাকিব আল হাসানকে এক ওভারে পাঁচ ছক্কা মেরেছিলেন ড্যান ক্রিস্টিয়ান। পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে তাকে নিয়ে বাজি ধরলো অস্ট্রেলিয়া। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে নামানো হলো ওপেনিংয়ে। যদিও কাজ হয়নি। নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিতে শুরুতেই বিদায় নেন ক্রিস্টিয়ান।

চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ান। মিরপুরের কঠিন পিচে যেখানে ওভারে একটা ছক্কা মারা কঠিন, সেখানে সাকিবের মতো অভিজ্ঞ বোলারকে মারেন পাঁচ ছক্কা। বল-ব্যাটে কানেক্ট হওয়ায় তাকে ওপেনিংয়ে নামায় অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্ট। যদিও এই ব্যাটসম্যানকে বাড়তে দেননি নাসুম। বোল্ড করে মাত্র ৩ রানে থামিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানকে।

নাসুমের ম্যাজিক এখানেই শেষ নয়। ক্রিস্টিয়ানের পর অস্ট্রেলিয়া দলের ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান মিচেল মার্শকেও তুলে নিয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে রানে আছেন মার্শ। অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন নিয়মিত মুখ না থাকলেও তিনি আশার আলো দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশ সফরেও আছেন ছন্দে। সেই তাকে শুরুতেই ফিরিয়ে দেওয়া মানে অনেকটাই নির্ভার হয়ে যাওয়া। নাসুম বাংলাদেশকে এনে দিলেন সেই স্বস্তি। বাঁহাতি স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন মার্শ। ফিল্ড আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। ৯ বলে ৪ রান করে ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে।

নাসুম জাদুর পর সাকিবের আঘাত। উইকেটের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হলো মাত্র ২ বল। বল হাতে নিয়েই করলেন উইকেট উদযাপন। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে বোল্ড করে ফিরিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার। ওয়েড বাংলাদেশ সফরে হয়েছেন অধিনায়ক। নেতৃত্বের ভার তার পারফরম্যান্স আরও খারাপ করে তুলেছিল। শেষ টি-টোয়েন্টিতে এসে তবু কিছুটা হলেও অবদান রাখলেন। সাকিবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২২ বলে করেন ২২ রান। ইনিংসটি সাজিয়েছেন ২ ছক্কায়।

সাকিবের পর উইকেট উৎসব করেন মাহমুদউল্লাহ। বেন ম্যাকডারমট তাকে মারলেন বিশাল ছক্কা। মাহমুদউল্লাহ ভড়কে যাননি, বরং দুর্দান্তভাবে ফিরে এলেন এক বল পরই। যে ম্যাকডারমটের কাছে ছক্কা হজম করলেন, সেই তাকেই ফেরালেন রিটার্ন ক্যাচ নিয়ে।

ওখানেই শেষ অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সম্ভাবনা। এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইনআপ। সাকিব-সাইফউদ্দিন ঝড়ে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়াকে সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জায় ডুবিয়ে জয় উৎসবে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেনি ‍বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে ভালো শুরু পায়। তবে সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ইনিংস বড় করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার চমৎকার বোলিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে করেছে ১২২ রান।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ব্যাটসম্যানরা করেছেন ক্যাচ প্র্যাকটিস। বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন সহজ ক্যাচ দিয়ে। তবে এজন্য অস্ট্রেলিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং প্রশংসার দাবিদার। বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন ড্যান ক্রিস্টিয়ান-নাথান এলিসরা। সবচেয়ে সফল এলিস। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে হ্যাটট্রিক করা এই পেসার ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ক্রিস্টিয়ান ৪ ওভারে ১৭ রান খরচায় পেয়েছেন ২ উইকেট। আর একটি করে উইকেট নিয়েছেন অ্যাশটন টার্নার, অ্যাশটন অ্যগার ও অ্যাডাম জাম্পা।

তাদের চমৎকার বোলিংয়ের সামনে সর্বোচ্চ ২৩ রান করেছেন নাঈম শেখ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ রান মাহমুদউল্লাহর। সুবিধা করতে পারেননি তৃতীয় টি-টোয়েন্টি জয়ের নায়ক আফিফ হোসেন (১০) ও নুরুল হাসান সোহান (৮)। প্রথমবার সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন ৮ বলে অপরাজিত ছিলেন ৪ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(পঞ্চম টি-টোয়েন্টি)

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২২/৮ (নাঈম ২৩, মাহমুদউল্লাহ ১৯, সৌম্য ১৬, মেহেদী ১৩, সাকিব ১১; এলিস ২/১৬, ক্রিস্টিয়ান ২/১৭)।

অস্ট্রেলিয়া: ১৩.৪ ওভারে ৬২ (ওয়েড ২২, ম্যাকডারমট ১৭, জাম্পা ৪; সাকিব ৪/৯, সাইফউদ্দিন ৩/১২, নাসুম ২/৮)।

ফল: বাংলাদেশ ৬০ রানে জয়ী।

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ ৪-১ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান।

সিরিজসেরা: সাকিব আল হাসান।