যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে দেশে তোলপাড় চলছে। সরকারি দল বলছে, বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে ৩.৭৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। অনুসন্ধান চলছে, ব্যয় বাড়তে পারে। টাকার উৎস খোঁজা হচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি এ অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে নাকচ করে দিয়েছে। সরকারই ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে রেখেছে বলে পালটা অভিযোগ করে বিএনপি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য, দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরতে লবিস্ট নয়, পিআরের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।

এমন অভিযোগ-পালটা অভিযোগের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেন বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুড গভর্নেন্স ও দেশের ইতিবাচক ইমেজগুলো তুলে ধরার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। আর বিএনপি দেশের ক্ষতি করার জন্য বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘মানবিক নীতি : এখানে এবং এখন প্রদর্শনীর’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে লবিস্ট নিয়োগের এই ব্যাখ্যা দেন মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘লবিস্ট নিয়োগ করা আইন বিরোধী না। কিন্তু দেখতে হবে কী কারণে লবিস্ট নিয়োগ করে, উদ্দেশ্য কী? যখন কেউ কাউকে টাকা দেয় একটা লোককে কিডন্যাপ (অপহরণ) করার জন্য, তখন কিন্তু ওই অবজেকটিভটা ঠিক নয়। কিংবা যখন দেশের ক্ষতির জন্য অনেকে পয়সা দেয়, তদবির করার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে, সেটা কিন্তু খুবই অন্যায়।’

তিনি বলেন, ‘তারা দেশকে কোনো ধরনের সাহায্য করবে না। আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য আছে বিএনপি যে কয়টা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এর মূল উদ্দেশ্যটা দেশের ক্ষতি। আপনার-আমার মধ্যে ঝগড়া থাকতে পারে, কিন্তু আপনার-আমার ঝগড়া দেশের স্বার্থে কিনা, সেটা দেখতে হবে। যদি সেটা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে হয়, তা দুঃখজনক।’

তবে ড. মোমেনের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ যে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলে কথা আসছে, সেটি সরকার পিআর ফার্ম হিসেবে দেখে, লবিস্ট নয়।

মন্ত্রী বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গুড গভর্নেন্সের জন্য এবং দেশের ইতিবাচক ইমেজগুলো তুলে ধরার জন্য পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। আর বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছিল যাতে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি না হয়। তখন আওয়ামী লীগ ভুল পারসেপশনটা (ধারণা) চেঞ্জ (পরিবর্তন) করার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে। আমরা এটাকে বলি পিআর ফার্ম, নট লবিস্ট।’

বাংলাদেশে লবিস্ট নিয়োগের প্রথা অনেক আগে থেকে চালু হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো অনেকদিন ধরেই আছে, নতুন নয়। আপনি অন্য লোককে নিয়োগ করছেন দেশের ক্ষতি করার জন্য, কাউকে মেরে ফেলার জন্য, কিডন্যাপ করার জন্য। এগুলো দেশবাসী কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না।’

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, আট বছর ধরে বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ প্রমাণের কথা বলা হচ্ছে। তাহলে এতদিন সরকারের কাছে এই তথ্য ছিল না, নাকী তথ্য না জানতে পারা সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা?

মন্ত্রীর পালটা প্রশ্ন, ‘আপনারা আগে জানলেন না কেন, মিডিয়ার লোকের এটা জানার কথা, এটা আপনাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সবই ওয়েবসাইটের মধ্যে আছে, কোনো কিছু লুকানো না।’