ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলার কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র জীবিত ২৮ নাবিককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের লাশও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাবিকদের জাহাজ থেকে নামিয়ে টাগ বোটে করে জেটিতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের ইউক্রেনের একটি বাংকারে নেওয়া হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে পোল্যান্ড সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর তাদের দেশে পাঠানো হবে।
বর্তমানে মিশর সফরে থাকা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আজ বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমাদের পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে থাকা ২৮ নাবিককে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের মরদেহ রয়েছে।
এদিকে, আজ রাত ৯টায় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) পীযুষ দত্ত জানিয়েছেন, নাবিকদের জাহাজ থেকে টাগ বোটে করে জেটিতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ইউক্রেনের একটি বাংকারে নেওয়া হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে তাদের পোল্যান্ড সীমান্তে নেওয়া হবে। তারপর দেশে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জাহাজটি যে জায়গায় ছিল বর্তমানে সেখানেই আছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেন ইস্যুতে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রাশিয়া জীবিত ২৮ জনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা এবং নিহত নাবিকের লাশটি সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আজই আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পেয়েছি, যেটির খুব দরকার ছিল। যুদ্ধ পরিস্থিতিকালে জাহাজকে পরিত্যক্ত করার অনুমতি দিয়ে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটি আমরা ইউক্রেনকে জানিয়ে দিয়েছি।
রকেট হামলার কবলে পড়া বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের কী হবে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, জাহাজটি এখন পরিত্যক্ত রেখে আসতে হবে। কারণ, সেখানে মাইন পোতা রয়েছে। কাজেই জাহাজটা এখন যেখানে রয়েছে সেখান থেকে সরানো ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে আটকে থাকা বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে রকেট হামলার শিকার হয়। হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান (৩৩) নিহত হন। তিনি বরগুনার বেতাগী উপজেলার ৩ নম্বর হোসনাবাদ ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে। ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দর চ্যানেলে নোঙর করা জাহাজটিতে ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন।
বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। সেখান থেকে কার্গো নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্য বোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেয় শিপিং কর্পোরেশন। শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এই জাহাজ। এরপর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।