করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঈদুল আজহার পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। ওই সময় সব ধরনের শিল্পকারখানাও বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বাণিজ্য সচল রাখতে বিধিনিষেধের সময় শিল্পকারখানা চালু রাখতে চান শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। তারা সব ধরনের কারখানা চালু রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানান দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, বিধিনিষেধের মধ্যে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ রাখা হলে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিঘ্নিত হবে। এতে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রী, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বোতলজাত পানীয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ইত্যাদি উৎপাদন বন্ধ থাকলে সাধারণ ভোক্তারা সমস্যায় পড়বেন। পণ্যসামগ্রী সঠিকভাবে সরবরাহ ও বাজারজাত না হলে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ বিপদে পড়বেন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, রফতানি খাতের কারখানা বন্ধ থাকলে নির্ধারিত সময়ে পণ্য রফতানি করা সম্ভব হবে না। এতে রফতানির ক্রয়াদেশ বাতিলের আশঙ্কা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিসহ প্রায় ১৮-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে গ্রীষ্ম ও বড়দিন এবং আগামী শীতের বস্ত্র খাতের ক্রয়াদেশ হাতছাড়া হতে পারে। এক মাসের রফতানি শিডিউল বিঘ্নিত হলে পরবর্তী ছয় মাসের রফতানি শিডিউলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে উৎপাদন বন্ধ থাকলে আমদানি করা কাঁচামাল অব্যবহৃত হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এতে আমদানিকারক ও উৎপাদক উভয়ই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া ক্ষুদ্র ও ছোট কারখানা লম্বা সময় বন্ধ রাখা হলে উদ্যোক্তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। এমনকি কারখানাগুলো পুনরায় চালু করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপনে ওষুধ কারখানার বিষয়েও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। যদি ওষুধ কারখানা বন্ধ রাখা হয়, তাহলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। অপরদিকে ট্যানারি বন্ধ রাখা হলে কোরবানির ঈদে সংগৃহীত চামড়া সংরক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হলে খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দেবে। সেজন্য ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও সব ধরনের শিল্পকারখানা চালু রাখা প্রয়োজন।
এর আগে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও রফতানিমুখী পোশাকসহ শিল্পকারখানা উৎপাদন চালু ছিল। তবে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) করোনায় চলাচলে নতুন করে বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ১৪ জুলাই (বুধবার) মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই (শুক্রবার) সকাল ৬টা পর্যন্ত আরোপিত সব বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। তবে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত চলাচলে বিধিনিষেধ থাকবে। ওই সময় সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিজিএমইএর কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক হয়। তৈরি পোশাক, বস্ত্র, টেরিটাওয়েল ও সরঞ্জাম খাতের ব্যবসায়িক সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ ও বিজিএপিএমইর সভাপতিরা ছাড়াও বৈঠকে এফবিসিসআই সভাপতি জসিম উদ্দিন ছিলেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিধিনিষেধে শিল্প-কলকারখানা বন্ধ রাখার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচ ব্যবসায়িক সংগঠন। ঈদের পর দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধে পোশাকসহ রফতানিমুখী শিল্পকারখানা চালু থাকবে কি না, সেটি নিয়ে শনিবার সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।