আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর জন্য বিপদের ঘন্টা বাজিয়ে তুষারাচ্ছাদিত উত্তর মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। গ্রীষ্মকালে যে অঞ্চলে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকার কথা, সেখানে গত প্রায় ২ বছর ধরে তাপমাত্রা উঠছে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও ওপরে।
এর মধ্যে ২০২০ সালের জুন মাস ছিল উত্তর মেরুর জন্য এ যাবৎকালের ইতিহাসের উষ্ণতম মাস। ওই বছর ২০ জুন বিশ্বের শীতলতম স্থান বলে পরিচিত ভরখয়ানাস্ক শহরে তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
ভরখয়ানাস্ক রাশিয়ার বিস্তৃত ভূখণ্ড সাইবেরিয়ার একটি শহর। উত্তর মেরুর মূল কেন্দ্র আর্কটিক মূল কেন্দ্র থেকে শহরটির দূরত্ব মাত্র ১১৫ কিলোমিটার। এটি বিশ্বের শীতলতম শহর বলে পরিচিত।
তবে মঙ্গলবারের বিবৃতিতে ডব্লিউএমও বলেছে, বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় উত্তর মেরু অঞ্চলের আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে অনেক দ্রুতগতিতে এবং বিগত বছরগুলোর তুলনায় তাপমাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আর্কটিক অঞ্চলের জমাট বরফ ও সাগরের বাস্তুসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
WMO has recognized temperature of 38°C (100.4°F) in Verkhoyansk (Russia) on 20.6.2020 as new #Arctic record
It occurred during a prolonged heatwave, which drove massive fires and sea ice loss and contributed to 2020 being one of 3 warmest years on recordhttps://t.co/usGa3FsTQW pic.twitter.com/QYvEG1yj36— World Meteorological Organization (@WMO) December 14, 2021
টানা তাপপ্রবাহ ও তার প্রভাবে সৃষ্ট দাবানল এই দিনের পর দিন এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। আরও বলা হয়েছে, নিকট ভবিষ্যতে উচ্চমাত্রার তাপপ্রবাহ, ঝড়, দাবানালসহ বড় কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানতে পারে আর্কটিক অঞ্চলে।
ডব্লিউএমওর মহাপরিচালক পেট্টেরি তালাস এ সম্পর্কে বলেন, ‘আর্কটিক অঞ্চলের আবহাওয়ার ধারাবাহিক পরিবর্তন আমরা মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমদের পর্যবেক্ষণ বলছে, উত্তরমেরু অঞ্চলের সাম্প্রতিক আবহাওয়াচিত্র আমাদের জন্য একটি বিপদ ঘণ্টা।’
‘অর্থাৎ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামনে বিশ্বজুড়ে যে বিপর্যয় আসতে যাচ্ছে, তারই আভাস পাওয়া যাচ্ছে আর্কটিকের সাম্প্রতিক আবহাওয়া পরিস্থিতিতে।’
বিবৃতিতে ডব্লিউএমও জানিয়েছে, আর্কটিক অঞ্চলের সাম্প্রতিক এই আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণ ও তা প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব- তা নির্ধারণের জন্য সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনাও করা হচ্ছে।
এদিকে, উত্তর মেরুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দক্ষিণ মেরুর (অ্যান্টার্কটিকা) তাপমাত্রাও। গত বছর জুন মাসে অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা উঠেছিল ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ পর্যন্ত ওই অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
সূত্র: আলজাজিরা