কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটে পিকআপ ভ্যানচাপায় নিহত পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাদের পৈতৃক বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
এদিকে ১০ দিনের ব্যবধানে স্বামী ও পাঁচ ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মানু বালা শীল। শোক সামলে তাকেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান দেখভাল করতে হয়েছে। শ্রাদ্ধের অংশ হিসেবে নিহত পাঁচ ভাইয়ের ছবি সামনে রেখে পূজার আয়োজন করা হয়। সদ্য বিধবা মা মানু বালা শীল এবং তার নিহত সন্তান অনুপম শীলের স্ত্রী পপি বালা শীল, নিরুপম শীলের স্ত্রী গীতা শীল, স্মরণ শীলের স্ত্রী কৃষ্ণা শীল, দীপক শীলের স্ত্রী পূজা শীল ও চম্পক শীলের স্ত্রী দেবী শীলের সঙ্গে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অংশ নেন অনুপম শীলের শিশুপুত্র অর্কশীল (৭), স্মরণ শীলের শিশুপুত্র অভি শীল (৪) ও দীপক শীলের শিশুপুত্র আয়ুশ (৬)।
একসঙ্গে পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠাকে ঘিরে নিহতদের বাড়িতে ভিড় করেন শোকাহত স্বজন ও প্রতিবেশীরা। স্বজন হারানোর বেদনায় শোকে কাতর নিহতদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়রা। সংসারের উপার্জনক্ষম পাঁচ সদস্যকে হারিয়ে তারা এখন ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
প্রসঙ্গত, সদ্যপ্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এসে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় পাঁচ ছেলে অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন।
ঘটনার ১০ দিন আগে তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা ৯ ভাইবোন বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানকার একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে একসঙ্গে ৯ ভাইবোন (৭ ভাই ও ২ বোন) হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চারজনের মৃত্যু হয়, বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই।
ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্রের মেয়ে মুন্নী সুশীল। আহত হন সুরেশ চন্দ্রের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আহতদের মধ্যে রক্তিম শীল চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে আছেন। নিহতদের বোন হীরা শীল মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে।
নিহতদের বোন মুন্নী সুশীল বলেন, ঘটনার সময় অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে আমিও উপস্থিত ছিলাম। আমরা মৃত বাবার জন্য পূজা শেষে বাড়ি ফিরতে রাস্তা পার হচ্ছিলাম। তখনই পিকআপটি ধাক্কা দিলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পিকআপ প্রথমে ধাক্কা দিয়ে কিছুদূর সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। পরে চালক গাড়িটি পিছনের দিকে চালিয়ে এনে চাপা দিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে।