নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একটি এতিমখানায় রাতের খাবার খাওয়ার পর অন্তত ২০ জন শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছে নূর হাদি নিশান (১০) নামে এক শিশু। তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিশুটির বাড়ি উপজেলার পূ্র্ব একলাশপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আনোয়ার মিয়া।
এ ঘটনায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে অসুস্থ আরও ১৭টি শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থ হওয়া অন্য শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে স্থানীয় একলাশপুর মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালে ভর্তি করানো শিশুরা হলো—নুর হোসেন (১০), শান্ত (১০), রিফাত (৯), মেহরাজ (১২), মামুন (১১), শিপন (১২), মারুফ (১০), আলিফ (১০), মামুন (১০), শাহীন (১০), আরমান (১০), সোহাগ (১০), আশিক (১২), আবদুর রহিম (৮), পারভেজ (১০), মোজাম্মেল (১০) ও সামির (১০)।
হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, বেগমগঞ্জের একটি এতিমখানায় শিশুরা রাতের খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাত পৌনে ১১টা থেকে সোয়া ১২টা নাগাদ ১৮টি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে একটি শিশু মারা গেছে।
মাদ্রাসা ও এতিমখানা শিক্ষক মো. দাউদ ইব্রাহিম সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার দুপুরে এতিমখানার ছাত্রদের জন্য গরুর মাংস রান্না করা হয়। দুপুরে রান্না করা গরুর মাংস দিয়ে এশার নামাজের পর তাদের রাতের খাবার দেওয়া হয়। ২০ জন ছাত্র প্রথমে খেতে বসে। খাবার শুরু করার পর শিক্ষার্থীদের কাছে মাংস দুর্গন্ধ অনুভূত হলে তারা আর মাংস খায়নি। ভাতের সঙ্গে থেকে যাওয়া ঝোল দিয়ে খাওয়া শেষ করে।
তিনি জানান, খাবার শেষ করার কিছুক্ষণ পর শিশুরা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। তারা একের পর এক বমি করা শুরু করে। তাৎক্ষণিক তাঁরা স্থানীয় একজন চিকিৎসককে ডেকে এনে ঘটনা জানালে তিনি অসুস্থ শিশুদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। এরপর গুরুতর অসুস্থ ১৮জন শিশুকে অন্যান্য শিক্ষকেরা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশানকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, মাদ্রাসা ও এতিমখানাটিতে সর্বমোট ১২০টি শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৬১ জন এতিম শিশু রয়েছে। প্রথম দফায় খেতে বসা ২০ জন শিশুর সমস্যা হচ্ছে দেখে বাকিরা আর রাতের খাবার খায়নি।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, এতিমখানায় খাবার খেয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া একই ঘটনায় আরও ১৭টি শিশুকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তীতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।