অ্যাম্বুলেন্স ঘোষণায় মাইক্রোবাস আমদানি কিংবা কর ফাঁকি দিতে যারা জাল টিআইএনে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। ভবিষ্যতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করা তো যাবেই না, উলটো বিআরটিএর শাস্তির মুখে পড়তে হবে। অন্য দিকে আয়কর রিটার্নে তথ্য গোপন করলে নির্ধারিত করের সঙ্গে জরিমানাও গুনতে হবে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর গাড়ির মালিকদের আয়কর রিটার্ন ও রেজিস্ট্রেশনে শৃঙ্খলা আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বিআরটিএ সমঝোতা চুক্তি করেছে। এতে স্বাক্ষর করেন এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগের মহাপরিচালক স্থপতি আনোয়ার হোসাইন এবং বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) লোকমান হোসেন মোল্লা। চুক্তির আওতায় দুই সংস্থাই নিজেদের সার্ভারের রিয়েল টাইম তথ্য আদান-প্রদান করবে। বিআরটিএ এনবিআরের ই-টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) ও অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সার্ভারে প্রবেশ করতে পারবে। অন্য দিকে এনবিআরও বিআরটিএর সার্ভারে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য যাচাই করতে পারবে।

আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে দীর্ঘ দিন যাবৎ নৈরাজ্য চলছিল। যেমন অ্যাম্বুলেন্স ঘোষণায় মাইক্রোবাস আমদানি হয়। ক্ষেত্রবিশেষে শুল্ক ফাঁকি দিতে কাস্টমসে মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্স ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই অ্যাম্বুলেন্সকে বিআরটিএ থেকে মাইক্রোবাস হিসাবে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হয়েছে। কাস্টমস বা বিআরটিএর সমন্বয়হীনতার কারণে এ ধরনের জালিয়াতি প্রতিহত করা যাচ্ছিল না।

জাল টিআইএনে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এক হিসাবমতে দেশে ৫ লাখেরও বেশি গাড়ি জাল টিআইএন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। আবার একাধিক গাড়ি থাকলেও এনবিআর নির্ধারিত হারে ফি আদায় করা হতো না। এ চুক্তির ফলে সব ধরনের জালিয়াতি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় বহুলাংশে বাড়বে। সূত্র জানায়, এখন থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধনের সময় বিআরটিএ এনবিআরের ই-টিআইএন সার্ভারে ঢুকে গ্রাহকের টিআইএন সঠিক নাকি ভুয়া তা যাচাই করবে। এরপর কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে প্রবেশ করে গাড়ির বিল অফ এন্ট্রি (বি/ই) যাচাই করবে। বিল অফ এন্ট্রি যাচাই করলে গাড়ির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। তখন অ্যাম্বুলেন্স ঘোষণা আনা গাড়ি মাইক্রোবাস হিসাবে রেজিস্ট্রেশন সম্ভব হবে না। একইভাবে করদাতার জমা দেওয়া রিটার্ন যাচাই করবে আয়কর অফিস। বিআরটিএর সার্ভারে এনআইডি, টিআইএন বা গাড়ির নম্বর দিয়ে সার্চ দিলেই গাড়ির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। ফলে চাইলেও গাড়ির তথ্য আয়কর অফিসের কাছে লুকানো যাবে না।

জানা গেছে, গত বছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসাবে বিআরটিএ থেকে এক হাজার ৮২১টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করে। গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে-বিএমডব্লিউ, ভলভো, মার্সিডিজ বেঞ্জ, আউডি, লেক্সাস, জাগুয়ার, হ্যামার, প্রাডো ও হ্যারিয়ার। ৮২১টি গাড়ির মধ্যে ১২৬টির রেজিস্ট্রেশনে জাল টিআইএন ব্যবহার করা করা হয়েছে। এতে টনক নড়ে উভয় সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের। এরপর বিআরটিএর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে জাল টিআইএনর তৎপরতা বন্ধে এনবিআর কাজ শুরু করে।

আয়কর অধ্যাদেশে জাল টিআইএন ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ কারাদণ্ডের বিধান আছে। অন্য দিকে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টিআইএন ভেরিফিকেশন না করলেও ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে। আয়কর বিভাগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে।