রাজধানীতে এ বছর কোরবানির পশুর চামড়ার ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। ক্রেতা কম থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন না কোরবানিদাতারা। চামড়ার দাম কম হওয়ায় ট্যানারির মালিকদের দুষছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, কোরবানিদাতাদের বাড়ির আঙিনায় বা গেটের সামনেই চামড়া পড়ে আছে। চামড়া বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজতে হচ্ছে। অল্পসংখ্যক ক্রেতা পাওয়া গেলেও খুব বেশি দাম বলছেন না তারা।
লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম ৫০০ টাকাও উঠছে না। ন্যায্য দাম না পেয়ে চামড়া বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না কোরবানিদাতা। এছাড়া মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও আগের মতো চামড়া সংগ্রহ করছেন না। ফলে চামড়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকে।
হাতিরপুলের বাসিন্দা শফিকুল আলম জানান, সকাল ৮টায় গরু জবাই করলেও দুপুর পর্যন্ত চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। চামড়া বিক্রির জন্য একজন ক্রেতা খুঁজে আনা হয়। তিনি মাত্র ৩০০ টাকা দাম বলেছেন। শেষ পর্যন্ত ৩০০ টাকাতেই চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। অথচ বিগত বছরগুলোতে কোরবানির আগেই চামড়ার ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত।
পুরান ঢাকার শান্ত জানান, পরিচিত এক ক্রেতা এক লাখ ৭০ হাজার টাকার গরুর চামড়া বাড়ির নিচ থেকে নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় বলেছে, বিক্রি করতে পারলে সে অনুযায়ী দাম দেবে।
একই এলাকার মৌসুমি চামড়ার ব্যবসায়ী সেন্টু হাসান বলেন, চামড়ার দাম কমে গেছে। এজন্য এবার চামড়া কিনছি না। আগে সারাদিন খাটিয়ে একজন শ্রমিককে হাজার টাকা দেওয়া যেত। এখন ১০০ টাকাও দেওয়া যায় না। গত তিন বছর ধরে এ ব্যবসায় নেই। চামড়া বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, সেটা কোনো গরিব মানুষের হাতেও দেওয়া যায় না।
রাজধানীর মান্ডা এলাকার খোরশেদ জানান, উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে প্রতি বছর চামড়া বিক্রি হতো। এবার কেউ ডাক না নেওয়ায় চামড়া পোস্তায় পাঠানো হচ্ছে। বিক্রির টাকা এলাকার গরিবদের মধ্যে বিলি করা হবে।
মৌসুমি চামড়ার ব্যবসায়ী রোমেল বলেন, আগে ৪০০ থেকে ৫০০ চামড়া কিনতাম। এবার সকাল থেকে পাঁচটা চামড়া কিনেছি। সেগুলো পোস্তায় গিয়ে ৫০০ টাকা করে বেঁচে এসেছি। আগে একই সাইজের চামড়া বিক্রি করতাম সাড়ে তিন হাজার টাকায়। কান ধরেছি, জীবনে আর চামড়া কিনব না!
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা মৌসুমি ব্যবসায়ী, তারা লোকসানে পড়ি। ট্যানারিতে চামড়ার দাম পাই না। গরিব মানুষের হক নষ্ট হয়। সব ট্যানারির মালিকদের কারসাজি। তাদের কারণে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হচ্ছেন।
সরকার এ বছর রাজধানীর জন্য লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের এ নির্দেশনা কেউ মানছেন না বলে অভিযোগ করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।