গণঅভ্যুত্থানের বিকল্প নেই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ১৪ বছর যাবৎ সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। এবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণঅভ্যুত্থানের কোনো বিকল্প নেই। আমরা সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাস করি না। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় অর্জন করতে চাই। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।

আজ রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী মুক্তি পরিষদ আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে সংবিধানের কথা বলছেন। কিসের সংবিধান? সরকার যেটা মুখে বলে সেটাই সংবিধান। আজ আপনারা কোথায় বিচার চাইবেন? বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে।  বেগম খালেদা জিয়াকে নিম্ন আদালতে সাত বছর সাজা দেওয়া হয়েছে আর সেটা হাইকোর্টের যাওয়ার পর দশ বছর করা হয়েছে। যেই মামলার কোনো ভিত্তি নেই। যে মামলায় দুই কোটি টাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি এখন ওই ব্যাংকে আট কোটি টাকা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো এখন করে আর লাভ নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা গত ১৪ বছর যাবৎ দেখছি, আমরা প্রেসক্লাবের বাইরে দাঁড়াব, সেটা দিচ্ছে না। আমরা পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলব, সেটাও তারা দিচ্ছে না। অর্থাৎ যখন জনগণ থেকে একটা সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন সে পাওয়ার (শক্তি) দিয়ে টিকে থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। সরকার সেটাই করছে। আমরা দাবি করব পেশি শক্তি ব্যবহার না করে এ মুহূর্তে এ ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গাজী সাহেবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলতে কী বোঝায়? একজন মুক্তিযোদ্ধা কখনও রাষ্ট্রদ্রোহী হতে পারেন না। এ ডিজিটাল সিকিউরিটি মামলায় সংগ্রামের বয়োবৃদ্ধ সম্পাদককে দীর্ঘ সময় আটক কারাগারে রাখা হয়েছে। আমার জানা মতে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে সাড়ে চার হাজার মামলা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে আপনারা জানেন, এ দেশে যারা স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলছে, গণতন্ত্রের জন্য কথা বলছে, তাদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওয়ার্ডের একটি কর্মীও বাদ যায়নি।

সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, একটা জাতির সবচেয়ে বড় সর্বনাশ হলো সেই দেশের নাগরিকদের সৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা খর্ব করা। সেই জাতির সামনে আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকে না। এ সরকার এই সর্বনাশটা করেছে, জাতির সৎ নেতা নির্বাচনের ক্ষমতাকে খর্ব করেছে। করোনায় যেমন বাংলাদেশ বিপর্যস্ত, তেমনি ফ্যাসিবাদের জোয়ারে নাগরিকের জীবনও কিন্তু আজ স্তব্ধ-বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এরা মানুষের জান বাঁচাতে পারবে না, জীবন বাঁচাতে পারবে না। এরা কেবল মানুষকে জেলে দিতে পারবে, নির্যাতন করতে পারবে। খুন-গুম করতে পারত, এখন করতে পারবে কিনা জানি না। কারণ আমরা যত বলেছি, তত শোনেনি। এখন গুম-খুন হওয়া ব্যক্তিদের খবর জানতে ৩০ তারিখ মায়ের ডাক অনুষ্ঠান করবে। আমরা বলেছি শোনেনি। এখন জাতিসংঘ ৩৪ জনের লিস্ট দিয়েছে, বলেছে এদের খবর জানতে চাই। জানাবে না? নাও জানাতে পারে। না জানাতে জানাতে নিজেরাই এক সময় অজানা জায়গায় চলে যাবে।

নয়া দিগন্তের সম্পাদক মহিউদ্দিন আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- কবি আব্দুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, ডিআরইউ সভাপতি মোরসালিন নোমানি, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।