বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এ পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ জন্য সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত এবং নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সর্তকতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ভারতের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিয় ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। গুলাব দুপুরে ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে, এখন তা আরও সরে গিয়ে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৪১৫ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল, এখন তা ৫২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। তবে মোংলা ও পায়রা বন্দরের দিকে কিছুটা এগিয়েছে। মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ছিল ৪৫০ কিলোমিটার দূরে, এখন আছে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে। পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার থেকে এগিয়ে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থলের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গভীর সাগরে বিচরণ করতে না করা হয়েছে।
পূর্ব-মধ্য ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি এখন উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেটের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর দেশের নদীবন্দরগুলোর পূর্বাভাসে বলছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বদিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য এসব এলাকার বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর
ঘূর্ণিঝড়টি রবিবার রাতের দিকে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উত্তরাঞ্চল এবং উড়িষ্যার দক্ষিণাঞ্চল অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ভারতের স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত কী?
গভীর সাগরে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বন্দর তখনও নিরাপদ, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথে বিপদে পড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি ঝড়ের নামকরণ করে। ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির অধীন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ওমান—এই আট দেশ। এবারের ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ নামটি পাকিস্তানের প্রস্তাব করা। এর অর্থ গোলাপ ফুল। এর আগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘ইয়াস’। গত মে মাসে এটি ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল।