রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা আবু জাফর হাজারীবাগ গরুর হাট থেকে ঈদের দুদিন আগে কোরবানির জন্য হাসিলসহ ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় একটি গরু কেনেন। আজ (২১ জুলাই) সকাল ৭টায় ঈদের নামাজ পড়ে গরুটি কোরবানি দেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত চামড়া কিনতে কেউ আসেননি। দুপুর দেড়টার দিকে এক তরুণ মৌসুমি ক্রেতা এসে চামড়ার দাম ৩০০ টাকা বললেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে তা বিক্রি না করে মাদরাসায় দিয়ে দেন আবু জাফর।  তিনি বলেন, ‘চামড়া কেনার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি, অনেকে হয়তো বিশ্বাসই করবে না।’

আবু জাফর জানালেন, আগের বছরগুলোতে চামড়া কেনার অনেক লোক পাওয়া যেত। ভালো দামে চামড়া বিক্রি করে তিনি অর্ধেক টাকা মাদরাসায় আর অর্ধেক দরিদ্রদের দান করতেন। কিন্তু এখন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নামমাত্র মূল্যে চামড়া কিনে লাভে বিক্রি করছেন।

এদিকে, মৌসুমি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছরও চামড়ার ভালো দাম পাননি তারা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বাজার কিছুটা ভালো হলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়।

আর সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে, কয়েকবছর আগেও যেখানে মাঝারি সাইজের গরুর চামড়া তারা প্রায় দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন সেখানে এ বছন তো অনেক কম দামেও চামড়া কেনার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তবুও কেন এত হা হুতাশ ব্যবসায়ীদের? তাহলে কম দামে কেনা চামড়ার লাভ যাচ্ছে কার পকেটে?

সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছর পাড়া মহল্লায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ঘুরে ঘুরে কমবেশি দামে চামড়া কিনলেও এবার সুকৌশলে সিন্ডিকেট করে তারা চামড়া কিনতে বাড়ি বাড়ি ঘোরেননি। গোপনে গোপনে লোক পাঠিয়ে চামড়া কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর বলেছেন, চামড়া ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে, যা দাম পান ছেড়ে দেন। অনেকেই দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে ক্রেতা না পেয়ে নামমাত্র দামে বিক্রি করেছেন কিংবা মাদরাসায় দান করে দেন। করোনার কারণে এবার মাদরাসা থেকেও সেভাবে শিক্ষার্থীদের কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য পাড়া-মহল্লায় দেখা যায়নি।

গত ২০ বছর ধরে চামড়া কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত দাউদ খান নামে এক ব্যবসায়ী বুধবার দুপুরে ধানমন্ডি ল্যাব এইড হাসপাতালের অদূরে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লবন মাখানো চামড়া দেখে দেখে কিনছিলেন। তিনি জানান, তার এবার ১০ হাজার পিস চামড়া কেনার টার্গেট রয়েছে। ইতোমধ্যে দেড় হাজার পিস কিনে ফেলেছেন। সবগুলোই ৫০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে কিনেছেন বলে জানান তিনি।

রাজধানীর জিগাতলার একটি মাদরাসার সুপারভাইজার জামালউদ্দিন জানান, তিনি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে ১২৫ পিস চামড়া বিক্রি করেছেন। গতবারও এমন দামেই বিক্রি করেছিলেন।

সাভারের হেমায়েতপুরের বাধন লেদার এক্সপোর্টের একজন কর্মকর্তা বুধবার দুপুরে জানান, তিনি এক হাজার পিস চামড়া কেনার টার্গেট নিয়ে এসেছেন। এ পর্যন্ত ৬০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকায় ১০০টি চামড়া কিনেছেন। তার মতে এবার বাজার ভালো। গতবছর চামড়ায় লোকসান হলেও এবার হয়তো লাভের মুখ দেখবেন। তিনি জানালেন, করোনা মহামারি থাকা সত্ত্বেও এবার আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা রয়েছে।

জাহিদ আলম নামে এখন মৌসুমি ব্যবসায়ী বলেন, ‘চামড়ার ব্যবসা আগের মতো নেই। আগে পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া কিনে চামড়া প্রতি দুই-চারশ টাকা লাভে পাইকার বা আড়তদারদের কাছে বিক্রি করা যেত। কিন্তু এখন পাইকাররা কেনা দামের চেয়েও কম দামে চামড়া কিনতে চায়। তারা জানে, চামড়া বিক্রি না করলে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পুরোটাই লোকসান হবে। এ কারণে তারা কেউ সীমিত লাভে আবার কেউ লোকসানেও চামড়া বিক্রি করেন।’

তার দাবি, মূলত লাভ করেন চামড়ার পাইকারি আড়তদাররা। তিনি আরও বললেন, ‘যারা এ বছর পশু কোরবানি দিয়েছেন তারা চামড়া কেনার লোক খুঁজে পচ্ছেন না। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবাই হা হুতাশ করছেন যে তাদের তেমন মুনাফা হচ্ছে না। তাই সাধারণ মানুষের মনেও প্রশ্ন জাগে লাভের টকা তাহলে যাচ্ছে কার পকেটে?’