এমন অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যে বয়সের তুলনায় চেহারায় কমবয়সী ছাপ শুধু অসুবিধাই ফেলে না বরং কর্মক্ষেত্রে একনিষ্ঠ হওয়ার পরও এটি আপনার কর্মদক্ষতার উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে

তরুণ থাকতে কে না চায়? সকল নারী পুরুষই চায় তার চেহারায় তারুণ্য থাকুক। কিন্তু এটি আমাদের হাতে নেই। আমরা কেবল অন্তরে চিরসবুজ থেকে তারুণ্য ধারণ করতে পারি। তবে চেহারায় কমবয়সী ছাপ থাকাটা কারো জন্য আর্শীবাদ হয়ে আসে।

আপনি হয়তো “প্রোজেরিয়া” নামে একটি রোগ সম্পর্কে জেনে থাকতে পারেন, যে রোগে তরুণদেরকে বেশি বয়স্ক মনে হয়। তবে, আজ আমরা বলছি এর বিপরীত রোগের কথা, যে রোগে বেশি বয়সেও চেহারায় কমবয়সী ছাপ থাকে।

এটি খুব স্বাভাবিক। তাদেরকে দেখতে তরুণ লাগছে, তারা বেশ সুখী এবং ইতিবাচক। কিন্তু এটি তাদের ক্যারিয়ারের জন্য কি ইতিবাচক?

২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অ্যান্টি-এজিং পণ্যের বিক্রি ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তথ্য থেকে কিছুটা হলেও বোঝা যায় যে, নিজেদেরকে তরুণ দেখাতে কতটা উদ্বিগ্ন।

তবে কর্মক্ষেত্রে ব্যাপারটি কিন্তু একদমই আলাদা। কর্পোরেট ব্যক্তিরা এমনকিছুতে বিনোয়োগে আগ্রহী না যা তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।

চেহারায় কমবয়সী ভাব থাকায় কর্পোরেট ক্ষেত্রে বহুবার বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা জানান পেশাগত কারণে ঢাকায় বসবাসরত মাহমুদুল হাসান।

তিনি বলেন, “যখনই চেহারায় প্রাপ্তবয়স্ক ছাপযুক্ত কোনো সহকর্মী বসের কাছে কোনো কাজ বা ছুটির জন্য গেছেন তখন তার সাথে তুলনামূলক ভাল আচরণ করা হয়েছে। তবে আমার সাথে অন্যরকম আচরণ করা হয়েছিল। এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক, এবং এটি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এটিকে বর্ণবাদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে – যেমনভাবে একজন সাদা আমেরিকান এবং একজন আফ্রিকান-আমেরিকান এর সাথে কাজের ক্ষেত্রে আলাদা আচরণ করা হয়।”

অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান এবং যোগ্যতার প্রমাণ রাখার পরও সুপারভাইজারার কমবয়সী চেহেরার কর্মীদের উপর আস্থা রাখেন না। কমবয়সী চেহারার লোকেদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় “আত্মনিয়ন্ত্রণ“ দক্ষতা কম বলে মনে করা হয়। যা তাদের আত্মবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।

প্রকৃতপক্ষে, এমন অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যে বয়সের তুলনায় চেহারায় কমবয়সী ছাপ শুধু আপনাকে অসুবিধাই ফেলে না বরং আপনি কর্মক্ষেত্রে একনিষ্ঠ হওয়ার পরও এটি আপনার কর্মদক্ষতার উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

“বেবি ফেস ওভার-জেনারালাইজেশন এফেক্ট” ১৯৮০ সালে প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল। এর আবিষ্কারক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডিডে ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল রিলেশনের অধ্যাপক লেসেলি জেব্রোভিটস এর মতে, যখন কোনো ব্যক্তি শিশুর মুখের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তখন লোকেরা ধরে নিতে পারে যে ওই লোকের ব্যক্তিত্বের মধ্যেও শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

তার আরেকটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে কমবয়সী চেহারার এবং নারীদের ক্ষেত্রে অনুকম্পা দেখানো হয়েছে যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বুদ্ধিদীপ্ততা এবং নেতৃত্বের গুণাবলীকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

তবে মুদ্রার অপরপিঠও রয়েছে

“২০২০ সালের অক্টোবর মাসের ঘটনা। আমি একটি চাকরি জন্য সাক্ষাত্কার দিতে গিয়েছিলাম। সাক্ষাত্কার কক্ষে প্রবেশের পর একজন সাক্ষাত্কার গ্রহণকারী আমার জীবনবৃত্তান্তের দিকে একবার তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমি এখনও স্কুল পাস করেছি কিনা! আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দিয়েছিলাম এবং তিনি আজ আমার সহকর্মী । ”

দেব্রব্রত ভৌমিক নামের ঢাকায় কপিরাইটার হিসেবে কর্মরত এক ব্যক্তি এভাবেই তার আনন্দময় স্মৃতিচারণ করেন।

“শিশুসুলভ চেহারার যুবক হওয়া আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে কমবয়সী চেহারার একজন তরুণ হওয়াকে আমি উপভোগ করি; এবং এইরকম চেহারার কারণে কাজ করার সময় আমার সহকর্মীরাও অতিরিক্ত যত্ন নেন” তিনি আরও যোগ করেন।

প্রভাব ভাল বা খারাপ তা দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না। এটি পরিবর্তিত হয় এটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিক শক্তি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। তবে আপাতদৃষ্টিতে কর্পোরেট বিশ্বে এটি একটি বিশাল সমস্যা। তবে বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না।

বয়স সম্পর্কিত বৈষম্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে আইনি সুরক্ষা রয়েছে, তা আসল বয়স হোক বা এ সংক্রান্ত বিবেচনা হোক। এটি “বিবেচনা দ্বারা বৈষম্য” হিসাবে পরিচিত।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, চেহারাভিত্তিক কুসংস্কার রোধ করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই। ১৯৮৭ সালের শুরুতে, চেহারা এবং শারীরিক বৈষম্য ভিত্তিক বৈষম্য প্রদিরোধের জন্য হার্ভার্ড আইন পর্যালোচনা প্রবন্ধে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে বিবিসি প্রতিবেদনে জানা যায়।

“সত্য কথা বলতে, মানুষ হিসেবে আমাদের সকলেরই বিবেচনা শক্তি রয়েছে। এটি আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। তবে চেহারা দেখেই কোনো ব্যক্তির সাথে আমাদের আচরণ কি হবে তা ঠিক করে ফেলা উচিত না। আমাদের উচিত ব্যক্তিকে তার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব প্রমাণের সুযোগ দেওয়া,” যোগ করেন মাহমুদুল হাসান।

“শিশুসুলভ চেহারা দেখে যোগ্যতা বিবেচনা করা বা আচরণের বৈষম্য একধরনের বর্ণবাদ। তাই কর্মক্ষেত্রে এই চর্চা অবশ্যই পরিহার করা উচিত”, বলেন তিনি।

মানুষকে যদি বইয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে গল্পটি মস্তিষ্কের; মুখ বা বাহ্যিকতা প্রচ্ছদমাত্র। কোনও বইকে তার প্রচ্ছদ দ্বারা বিচার করা উচিত নয়।