করোনা সংক্রমণের ভীতিকর পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বইমেলা সব বন্ধ হলেও দিব্যি চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। মাসব্যাপী এ মেলা এখনো পুরোপুরিভাবে জমে উঠেনি। সপ্তাহের পাঁচদিনই মেলা প্রাঙ্গণ থাকে প্রায় ফাঁকা। তবে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর পূর্বাচলে সরিয়ে নেওয়া এ মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
অন্যান্য বছর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হলেও এবারই প্রথম মেলা বসেছে পূর্বাচলে। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরের পর সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় চোখে পড়েছে।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, ছুটির দিনগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থী বাড়লেও বেচাকেনা খুব বাড়েনি। মেলায় বেশিরভাগ মানুষই ঘুরতে আসছেন। ঘুরেফিরে চলে যাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ঢাকার ক্রেতা-দর্শনার্থীও বেশ কম। আশপাশের জেলাগুলো থেকে অনেকেই মেলায় আসছেন। তারা কেনাকাটার চেয়ে প্রথমবার নিজ চোখে বাণিজ্যমেলা দেখতে পারার দিকেই বেশি আগ্রহী।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, ভিড় বাড়লেও কিছু স্থানে জটলা বেশি। বিশেষত, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের (বিবিসিএফইসি) সামনে উন্মুক্ত স্থানে মানুষের আড্ডা লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে ছবি তোলার জন্য অনেকের হিড়িক। বিবিসিএফইসির ভেতরেও বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন এবং এর আশেপাশের ফাঁকা স্থানগুলোতে মানুষের চাপ বেশি। সে তুলনায় দুটি এক্সিবিশন হলের স্টলগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থী কম।
মেলায় তুলনামূলক খাবারের দোকানগুলোতে বেশি ভিড় দেখা গেছে। পোশাক, ঘর সাজানোর উপকরণ ও ক্রোকারিজের দোকানেও ক্রেতা-দর্শনার্থীরা উঁকি দিচ্ছেন। কম দামের পণ্যের দোকানগুলোতেই ক্রেতারা বেশি ঝুকছেন। সে তুলনায় বড় বড় আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানে ক্রেতা কম।
বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের এখলাসুর রহমান বলেন, অন্য বছর বাণিজ্য মেলায় শুক্রবারে কয়েক লাখ টাকা বিক্রি হতো। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। সবাই ঘুরতে আসছেন, ক্রেতার সংখ্যা কম। দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
বেশিরভাগ বিক্রেতা বলেছেন, ঢাকা থেকে যেসব ক্রেতা আসছেন, দূরত্ব ও পরিবহন জটিলতার কারণে তারা ভারি পণ্য কিনছেন না। তাই বড় বড় সামগ্রীর বিক্রি কম। অনেকে মেলায় এসে পণ্য পছন্দ করছেন, কিন্তু কিনছেন ঢাকার শো-রুম থেকে। ফলে বড় কোম্পানিগুলো বিক্রির চেয়ে পণ্যের অনলাইন প্রদর্শনী ও প্রচারণায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় শুক্রবার জনসমাগম নিয়ন্ত্রণসহ পাঁচ দফা নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আরোপিত এই বিধিনিষেধের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বাণিজ্যমেলার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষ। যদিও মেলায় প্রবেশের পরে অধিকাংশ ক্রেতা-দর্শনার্থী স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না।
মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আরোপিত বিধিনিষেধে বাণিজ্যমেলা বন্ধের বিষয়ে তো কিছু বলা নেই। তাই মেলা চলবে। নির্দেশনা মানাতে মেলা প্রাঙ্গণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে পেলেই জরিমানা করা হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মেলায় ১১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।