প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম বেসরকারী খাতকে জ্বালানি ও বিদ্যুত ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মূল চালিকাশক্তি হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি স্থানীয় সময় ২৯ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র -বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত ‘এনার্জি গোলটেবিল’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর পর এটি ছিল কাউন্সিলের প্রথম ইন-পারসন সভা ।

উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে আমেরিকান সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকার করেন এবং এক্ষেত্রে তাদের আরও বেশি অবদান রাখার আহ্বান জানান। তিনি দেশে তেল এবং গ্যাস অনুসন্ধানে, বিশেষত অফশোর ক্ষেত্রে, বিনিয়োগ করতে তাদের উৎসাহিত করেন।

উপদেষ্টা নিরবচ্ছিন্ন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের গবেষণা ও উন্নয়নে মার্কিন বেসরকারী খাতের সাথে অংশীদার হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ উল্লেখ করেন। তিনি আমেরিকান সংস্থাগুলিকে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ মডুলার রিঅ্যাক্টরের সম্ভাবনা অনুসন্ধান করার আহ্বান জানান।

তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সাথে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিতরণে নিবিড়ভাবে কাজ করছে এবং মার্কিন সংস্থাগুলি সেখানে বিনিয়োগের সুযোগগুলি অনুসন্ধান করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র -বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়াল গোলটেবিলে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা পূরণে দু’দেশের জ্বালানি অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে তাঁর সংস্থার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে জ্বালানি সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য বিজনেস কাউন্সিলের আসন্ন ‘এনার্জি টাস্কফোর্স’ একটি জ্ঞান-ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।

গোলটেবিল আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম, শেভরন, চেনিয়ার, এক্সিলারেট এনার্জি, এক্সনমোবিল, জিই পাওয়ার, সানএডিসন সহ বেশ কয়েকটি মার্কিন সংস্থার সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট লেভেলের কর্মকর্তা এবং যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার, যুক্তরাষ্ট্র -বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল, এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, জ্বালানি উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের জ্বালানি সম্পদ ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিব, রাষ্ট্রদূত ভার্জিনিয়া ই পামারের সাথে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে রাষ্ট্রদূত পামার দুদেশের জ্বালানি সহযোগিতা গভীরতর করার লক্ষ্যে বিশেষত: নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার বিষয়ে তাঁর সরকারের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বাইডেন -হ্যারিস প্রশাসনের জ্বালানি নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত পামার বাংলাদেশে দশটি কয়লা চালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট বাতিল করার সাম্প্রতিক পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

বিভিন্ন আমেরিকান প্রস্তাবের প্রশংসা করে জ্বালানি উপদেষ্টা বাংলাদেশের মতো দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে দুই দেশের যৌথ গবেষণা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সঞ্চয় ব্যাবস্থা এবং পারমাণবিক বিদ্যুত্ মডিউলার রিঅ্যাকটর প্রকল্প গ্রহণের উপর জোর দেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে বিবিধ জ্বালানি উৎসসমূহের সুষম ব্যবহার বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল নাগরিকের নিকট বিদ্যুৎ পৌছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জ্বালানি উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত পামারের সাথে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা করেন এবং বলেন যে এই অঞ্চলের দেশগুলির জ্বালানিশক্তি ভাগাভাগি করে প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন প্দক্ষেপকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে।

একই দিন সকালে, উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিল আয়োজিত বাংলাদেশের জ্বালানী নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে একটি অধিবেশনে অংশ নেন। আলোচনায় জ্বালানি উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন অ্যাডাপটেশন এবং সৃজনশীল মিটিগেশনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেন।