সুনামগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারকৃত ঝুমন দাস আপনের মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইট্‌সের ডাইভারসিটি প্লাজায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করে উদীচী যুক্তরাষ্ট্র শাখা।

স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে সাধারণ সম্পাদক জীবন বিশ্বাসের পরিচালনা ও সঞ্চালনায় বক্তব্য, জাগরণের গান এবং কবিতার পরিবেশনা দিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠান সাজানো হয়। বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যের মাঝে প্রতিবাদী সঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য অত্যন্ত সফলভাবে উপস্থিত শ্রোতা দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানের তদারকি করেন উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি ড. মো. আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঝুমন দাসকে অকারণ গ্রেফতারের বিষয়টি তুলে ধরেন এবং তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয় অনুষ্ঠানের সূচি তুলে ধরেন জীবন বিশ্বাস।

সমাবেশে উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের উপদেষ্টা এবং প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ তার মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি বর্তমান সরকারকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান জানিয়ে ঝুমন দাসের মুক্তি দাবি করেন। ঝুমন দাসকে মুক্তি না দিয়ে কেন তাকে আটক রাখা হয়েছে, তাও তিনি জানতে চান। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তিনি দেশের সাম্প্রদায়িক চক্রকে রুখতে সকল প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং আবারো ঝুমন দাসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। এর পরেই শৃঙ্খল ভাঙার গান— ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা’ পরিবেশন করে উদীচীর শিল্পীরা।

এরপর বক্তব্য রাখেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে যে অসাম্প্রদায়িক দেশের জন্ম হয় সে দেশে কীভাবে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন হয় – সে প্রশ্ন রাখেন। ঝুমন দাসের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে তিনি অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের বক্তব্যের পরে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়” গানটি পরিবেশিত হয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সমবেত কণ্ঠে। এর পরপরই বিপ্লব চক্রবর্তী আবৃত্তি করেন নির্মলেন্দু গুণের বিখ্যাত কবিতা ‘স্বাধীনতা উলঙ্গ কিশোর’। এর পরে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হাকিকুল ইসলাম খোকন। তিনিও ঝুমন দাসের মুক্তি দাবি করেন। এরপর আব্দুল লতিফ রচিত ও সুরারোপিত দেশের গান ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা’ পরিবেশিত হয়। এর পর বক্তব্য রাখেন উদীচীর শুভানুধ্যায়ী বিষ্ণুপদ গোপ। তিনি মানবাধিকারে কথা বলে সরকারের কাছে ঝুমন দাসের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
#জীবন বিশ্বাসের পরিচালনায় গণসংগীত পরিবেশন করছে উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পীরা

বিষ্ণুপদ গোপের বক্তব্যের পরে ‘আগুন নিভাইবো কে রে’ গানটি পরিবেশিত হয়। এই গানের পরে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্কের বিশিষ্ট প্রতিবাদী মুখ মিনহাজ আহমেদ শাম্মু। তিনি বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু জনগণের শাসন চলে কি না তা নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর চেতনা আমরা সমুন্নত রাখতে পারিনি। তিনিও ঝুমন দাসের মুক্তি দাবি করেন।

মিনহাজ আহমেদের বক্তব্যের পরে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ গানটি পরিবেশিত হয়। পরে বক্তব্য রাখেন তোফায়েল আহমেদ, যিনি সুনামগঞ্জের শাল্লারই বাসিন্দা কিন্তু বর্তমানে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বসবাস করছেন। তিনি শাল্লা থানার আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ ১৮ বছর। তিনি ঝুমন দাসের জামিন না হওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং তার মুক্তি দাবি করেন।

‘আমরা করব জয়’ এবং এর মূল ইংরেজি গান ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গানটির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল নিউইয়র্কের আরও কয়েকটি সংগঠন। তবে অনুষ্ঠানটি সাপ্তাহিক কাজের দিনে হওয়ার কারণে অনেকে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তবে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক পরিচয়ের নাজমুল আহসান, সাংবাদিক সঞ্জীবন সরকার, কাণু দত্তসহ আরও অনেকে।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী; মহাদেব মল্লিক, মুক্তা ধর, ফজলুল করিম, সমীর মণ্ডল, সংগীতা চক্রবর্তী, তৃষা মণ্ডল, শুক্লা চক্রবর্তী, নাজনীন সুলতানা, বেবী মণ্ডল, পরেশ ধর, বিপ্লব চক্রবর্তী, সুকান্ত দাস, প্রমিত মহান আচার্য্য, সুনিল বিশ্বাস, মোহিত আচার্য্য, হেনা রায়, সুক্তি বিশ্বাস, অনামিকা মজুমদার, উদিতা তন্বী, অনিতা মল্লিক, সাবিনা হাই উর্বি, দিব্য রায়, বিশ্বজিৎ কর্মকার, দীপ্ত রায়, শীলা ধর, সীমা রায়, স্মরণিকা চক্রবর্তী, প্রিমা রায়, তুষার রায়সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানটির সার্বিক গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও সংগীত পরিচালনায় ছিলেন উদীচী যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ সম্পাদক জীবন বিশ্বাস।