নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এবং ভালো নাটক নির্মাণের সংখ্যা কমে গেলেও চাহিদাসম্পন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিক বেড়েই চলেছে দিন দিন। করোনায় নাট্যাঙ্গণ অচল হয়ে পড়ার পর নতুন করে যখন নির্মাতারা নাটক নির্মাণে ব্যস্ত হচ্ছেন, তখনই কোনো কোনো চাহিদাসম্পন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রী তাদের পারিশ্রমিক এক লাফে বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে নির্মাতারাও বিপাকে পড়ছেন। নাটক নির্মাণ করতে গিয়ে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে নাটকের চরিত্রের সংখ্যাও কমিয়ে দিচ্ছেন। একদিনের শুটিংয়েই নাটকের নির্মাণ কাজ শেষ করছেন। এতে নাটকের মান কতটা ভাল হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়,বেশিরভাগ শিল্পী তাদের পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভান, তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, সাফা কবির, মিশু সাব্বির, শামীম হাসানসহ একাধিক শিল্পী।

অন্যদিকে, করোনা মহামারীর মধ্যেই পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। তিনি আগে এক ঘন্টার নাটক বাবদ পারিশ্রমিক নিতেন ৭০ হাজার টাকা। এখন নিচ্ছেন কমপক্ষে এক লাখ টাকা।

নির্মাতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত বছর পর্যন্ত তৌসিফ একটি একক নাটকে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিক নিতেন ৪০ হাজার টাকা। গত বছরের শুরু থেকেই তিনি ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। সেটি এখন আরও বেড়েছে।

জোভান আহমেদ গত বছর পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিতেন ৪০ হাজার টাকা। নতুন বছরে নিচ্ছেন কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা। একইভাবে মোশাররফ করিম, আফরান নিশো, মেহজাবীন চৌধুরীরও পারিশ্রমিক অনেক বাড়িয়েছেন। বর্তমানে তারা খন্ড নাটকের জন্য এক লাখ টাকার উপরে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন এবং ওভিসির পারিশ্রমিকও বাড়িয়েছেন তারকারা। মোশাররফ করিম, তানজিন তিশা, তাসনিয়া ফারিণ, সাবিলা নূর, অহনা, নাদিয়া নদীর মতো অনেকেই ৩ থেকে ১০ লাখ টাকার নিচে বিজ্ঞাপনের আলাপই শুরু করতে চান না। এছাড়া প্রথম সারির বেশিরভাগ অভিনেতা অভিনেত্রী একটি ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনে ৩ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। জয়া আহসান ও শবনম ফারিয়ার পারিশ্রমিক আরও বেশি।

তবে এক ঘণ্টার নাটকে দুই দিন সময় দিতে পারেন না মোশাররফ করিম। টেলিফিল্মের বেলায় দুই বা তিন দিনের মতও সময় দেন এই অভিনেতা। সে ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম পারিশ্রমিক নেন তিনি। শোনা গেছে, টেলিফিল্মে ১ থেকে দেড় লাখ  টাকা নিয়ে থাকেন মোশাররফ করিম। তবে তিন দিন সময় দিলেও কোন হাউজে একটানা কাজ করেন না এই অভিনেতা। তবে তার বিজ্ঞাপনের পারিশ্রমিক শুনলে অবাক হতে পারেন। তিনি প্রতি কাজের জন্য ১০ থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেন।

চঞ্চল চৌধুরী খণ্ড নাটকের জন্য নিচ্ছেন লাখ টাকা। ধারাবাহিকের জন্য প্রতিদিন নিচ্ছেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বিজ্ঞাপনে নিচ্ছেন ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা।

অভিযোগ উঠেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের যুক্তি হচ্ছে, ইউটিউব চ্যানেলে ভিউ বেশি এমন অভিনয় শিল্পীদের পারিশ্রমিকই তারা বাড়াচ্ছেন। বাস্তবতা হচ্ছে ইউটিউবে এসব বেশি পারিশ্রমিক নেয়া শিল্পীদের মধ্যে অনেকের নাটকই এখন আর কাঙ্খিত ভিউজ হচ্ছে না। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্তমানে বেশিরভাগ নাটকের কাহিনী প্রেম ও বিরহ কেন্দ্রিক। একটা সময় টেলিভিশনে মানসম্মত পারিবারিক নাটক প্রচার হতো বেশি। এখন সেসব নাটরে জায়গা দখল করেছে ভালবাসা নির্ভর গল্পের নাটক-টেলিছবি। এ ধারায় ইউটিউব চ্যানেলে ভিউ বৃদ্ধি করার জন্য নির্মিত হচ্ছে অশ্লীল সংলাপ ও দৃশ্যের নাটক। এখন অনেকগুলো বড় বড় গ্রুপ নাটক নির্মাণ করে ইউটিউব চ্যানেল থেকে বিপুল আয় করছে আর তারাই তারকাদের পরিশ্রমিক প্রতিযোগিতামূলক বাড়িয়ে সাধারণ পেশাদার নির্মাতাদের বিপাকে ফেলছে।