মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে চাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে গত কয়েক মাসে অন্তত ২৫ জন বাংলাদেশি যুবক জোহানেসবার্গ ও কেপটাউন বিমানবন্দর অতিক্রম করতে ব্যর্থ হওয়ার পর ফিরতি ফ্লাইটে ইথিওপিয়ান বিমানবন্দরে গিয়ে আটকা পড়েছেন। এ সুযোগে যুবকদের জিম্মি করে বাড়তি টাকা আদায় করতে মারধর করছে মানবপাচারকারী চক্র।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেখানকার জিম্মি যুবকদের কয়েকজন গোপনে যোগাযোগ করলে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। জিম্মি অবস্থায় থাকা বাংলাদেশি যুবকরা দালালের হুমকির কথা উল্লেখ করে জানান, মানবপাচারকারীরা বলেছে বাইরে কারও কাছে কিছু বললে মেরে ফেলা হবে। অনেকের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মোবাইল লুকিয়ে রেখে আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশি যুবকরা দীর্ঘদিন ইথিওপিয়ায় আটকা পড়া আছে। তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে না। তাদের নিয়ে আসা দালাল চক্র যুবকদের ফেরত নিতে কোনো ব্যবস্থা করছে না। বরং পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করতে জিম্মিদের নিয়মিত মারধর করছে। মানবপাচারকারীদের হাতে জিম্মি যুবকদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাদারীপুর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলায়।
আটকে পড়া যুবকদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এক মাস আগে ঢাকা থেকে জিয়া এবং কেপটাউনের ইব্রাহিমের দালাল চক্রের সঙ্গে জনপ্রতি সাত লাখ টাকা চুক্তিতে ২৫ জন বাংলাদেশি দেশ ছাড়ে। ভ্রমণ ভিসা নিয়ে কেপটাউন দিয়ে কন্টাক্টের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয় দালাল চক্রটি। ট্রানজিট থেকে বাংলাদেশিদের ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় ফেরত পাঠানো হয়। মূলত আদ্দিস আবাবা থেকে কাতার হয়ে ঢাকা পর্যন্ত বিমানের টিকেট না থাকায় এসব বাংলাদেশিরা আদিস আবাবা এয়ারপোর্টে আটকে পড়েন। সেখান থেকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে তাদের সরিয়ে নিয়ে দেশ থেকে টাকা আনতে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে মানবপাচারকারীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, যদিও সাত লাখ টাকার মধ্যে সবকিছু করার কথা ছিল। কিন্তু দালালরা এখন বাড়তি টাকার জন্য মারধর করছে। বিভিন্ন সময় দলাল চক্রটি আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ঢাকায় ফেরত পাঠানোর আশ্বাস দিলেও গত এক মাস ধরে ভুক্তভোগীদের কোনো সহযোগিতা করছে না।
তারা জানান, দীর্ঘদিন অনাহারে-অর্ধাহারে থাকার কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দালাল চক্রের সদস্যদের মারধরের শিকার হয়েছেন তারা।
এ অবস্থায় ইথিওপিয়ায় মানবপাচারকারীদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি যুবকদের উদ্ধারে ও দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীদের পরিবার।