আইপিএলে চড়া দামে বিক্রি হয়ে খেলার আশায় অনেক আগেই নিজ পতাকার দলকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে না করেছিলেন তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। শেষমেষ আইপিএলে কেউ কেনেনি তাকে। আফগান সিরিজও খেললেন। বিসিবির ভাবনা ছিল এমনকি প্রাথমিক কথাও ছিল যে সাকিব আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে টেস্ট খেলবেন। কিন্তু তাতেও রাজি না সাকিব। বলতে গেলে বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপনের মুখে ঝামটি মেরে দুবাই যাওয়ার আগে সাকিব বলে গেছেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন না। তার ভাষায়- এ মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় নেই বলে জানিয়েছেন সাকিব আল হাসান। সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজে দলে শুধু একজন ‘প্যাসেঞ্জার’ মনে হয়েছে নিজেকে, এমনটাই বলেছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার।

সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল আগেও। আইপিএলের সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে টেস্ট সিরিজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন সাকিব। তবে শেষ পর্যন্ত আইপিএলের নিলামে দল পাননি। এরপর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানিয়েছিলেন, সাকিব টেস্ট সিরিজে খেলবেন।

সাকিবকে রেখেই টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের দল ঘোষণা করে বিসিবি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাকিবের যাওয়া আবার সংশয়ে পড়ে যাচ্ছে আজ সাকিবের কথার পরই।

গতকাল রোববার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল মোহামেডানের জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে ছিলেন সাকিব। এরপর দুবাইয়ে যাওয়ার আগে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে বলতে হয়, আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে যে অবস্থায় আছি, মনে হয় না আমার পক্ষে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব। এ কারণেই আমার মনে হয়, আমি যদি একটা বিরতি পাই, যদি ওই আগ্রহটা ফিরে পাই, তাহলে আমার জন্য খেলাটা সহজ হবে।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৫ উইকেটের পর প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সাকিব নেন ২ উইকেট। শেষ টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য ছিলেন উইকেটশূন্য। ব্যাটিংয়ে কোনো ইনিংসেই ৩০ রানের বেশি করতে পারেননি। সাকিব বলছেন, আফগানিস্তান সিরিজে ঠিক নিজেকে খুঁজে পাননি তিনি, ‘আফগানিস্তান সিরিজে আমার মনে হয়েছে আমি একজন “প্যাসেঞ্জার”, যেটা কখনোই থাকতে চাই না। খেলাটা একদমই উপভোগ করতে পারিনি, পুরো সিরিজেই—টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে। চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি।’

আফগানিস্তান সিরিজে আমার মনে হয়েছে আমি একজন “প্যাসেঞ্জার”, যেটা কখনোই থাকতে চাই না। খেলাটা একদমই উপভোগ করতে পারিনি, পুরো সিরিজেই—টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে। চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি।

এ অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে খেলাটা ঠিক মনে করছেন না সাবেক এই অধিনায়ক, ‘আমার মনে হয় না, এমন মানসিকতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলাটা ঠিক হবে। আমি এই কথা জালাল ভাইয়ের (বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান) সঙ্গেও আলাপ করেছি। জালাল ভাই বলেছেন, দুই দিন উনিও চিন্তা করবেন, আমাকেও চিন্তা করার সময় দিয়েছেন। এরপরই আসলে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে বলে আমি মনে করি।’

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে আসবে, তার মধ্যে হয়তো অনেক বদলও হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে নিজের এমন শারীরিক-মানসিক অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজের খেলার বিপক্ষেই মত সাকিবের, ‘তখন (সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগপর্যন্ত) পর্যন্ত যদি আমার মন-মানসিকতা এমন থাকে, শারীরিক অবস্থাও এমন থাকে, তাহলে এটা (তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়া) দলের জন্যই ক্ষতি হবে। যেটা আগেও বলেছি, আমার নিজের প্রতি নিজের যে প্রত্যাশা, মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটা যদি আমি পূরণ করতে না পারি, তাহলে দলে থাকাটা খুবই দুঃখজনক হবে। এটা সতীর্থদের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো হবে।’

তবে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে খেলার ব্যাপারে কথা বলার সময় দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাকিব। কিন্তু এখনকার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ভিত্তিতে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের যেকোনো একটিতে খেলার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন তিনি, ‘আমি পাপন ভাইয়ের (বিসিবি সভাপতি) সঙ্গে কথা বলেছি, খেলব বলে রাজিও হয়েছি। কিন্তু এখন আমি যে মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় আছি… তাতে এমন হতে পারে যে ওয়ানডেটা না খেলে টেস্ট সিরিজটা খেলতে পারি। তাহলে হয়তো ভালো মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় থাকতে পারব, সেটা হতে পারে। এগুলো আসলে আলোচনার ওপর নির্ভর করবে।’

তবে এ মুহূর্তে নিজের এই অবস্থায় খেলাটা দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে ‘গাদ্দারি’ বলে মনে হচ্ছে তাঁর, ‘দলের সঙ্গে প্রতারণা—এই জিনিসটা আমি অবশ্যই চাই না। আমি চাই নিজের প্রতি নিজের যে প্রত্যাশা, দল আমাকে যেভাবে চিন্তা করে, সেভাবে যেন পারফর্ম করতে পারি, সেই অবস্থাতে থাকা। হ্যাঁ, এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই যে আমি পারফর্ম করব। তবে অন্তত জানতে পারব যে আমি আমার সেরা অবস্থানে আছি, দেশের হয়ে পারফর্ম করার মতো অবস্থানে আছি। কিন্তু আমি যদি জানি যে আমি সে অবস্থায় নেই, তাহলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই। অন্য একটা জায়গা নষ্ট করা, দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে গাদ্দারি করা ঠিক হবে বলে মনে করি না।’

১১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা হবে বাংলাদেশ দল। সফরে তিনটি ওয়ানডের সঙ্গে হবে দুটি টেস্ট। ওয়ানডে সিরিজ শুরু ১৮ মার্চ, টেস্ট সিরিজ শুরু হবে ৩০ মার্চ।