প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্পর্কিত সম্মেলন কপ২৬-এর ভাষণে বলেছেন, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জানাতে হবে। জাতীয় কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অভিযোজন বাস্তবায়ন করতে হবে।

সোমবার বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এর ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কার্বন নির্গমনকারীদের অবশ্যই তাদের উচ্চাভিলাষী এনডিসি পেশ এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’ পেন ওয়াই ফ্যানের প্লেনারি-২-তে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি) অধীনে কনফারেন্স অব দি পার্টিস (কোপ২৬) সম্মেলনের ২৬তম অধিবেশনে জাতীয় বিবৃতি দেওয়ার সময় তিনি চারটি প্রস্তাবের মধ্যে প্রথম প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী কার্বন নির্গমন হ্রাসের বিষয়ে বলেন, তাঁর সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে—দেশের এনডিসি আপডেট, ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল এবং ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আমাদের শক্তির ৪০ শতাংশ নেওয়া।

যুক্তরাজ্য গত রবিবার (৩১ অক্টোবর) থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত কোপ২৬ আয়োজন করছে। রাষ্ট্রপ্রধান, প্রতিনিধি এবং প্রচারকর্মীরা জলবায়ু জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় সমন্বিত প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় বসবেন।

প্রায় ২০০টি দেশ কোপ২৬-এ অংশ নিচ্ছে এবং দেশগুলোকে তাদের এনডিসি (পরিকল্পনা) জমা দিতে বলা হচ্ছে, যা নির্গমন হ্রাসে প্যারিস চুক্তির মূল বিষয় ছিল।

শীর্ষ সম্মেলনে দ্বিতীয় প্রস্তাবটি উত্থাপন করে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি২০ (দ্য ভালনারেবল২০)-এর সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর উচিত অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে ফিফটি-ফিফটি ভারসাম্য রেখে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।’

তৃতীয়ত, ‘উন্নত দেশগুলোর উচিত সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া এবং সিভিএফ দেশগুলোর উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও বিবেচনা করা’- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তার চতুর্থ ও চূড়ান্ত প্রস্তাবে বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বব্যাপী দায়বদ্ধতা ভাগ করে নেওয়াসহ লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অবশ্যই সমাধান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী নির্গমনের ০.৪৭ শতাংশেরও কম অবদান রাখা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।’ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত সাত বছরে আমরা জলবায়ু সম্পর্কিত ব্যয় দ্বিগুণ করেছি।’ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তার সরকার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে আমরা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রস্তুত করছি। সম্প্রতি আমরা একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং যুগোপযোগী এনডিসি জমা দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিস্তৃত সৌরশক্তি কার্যক্রম। আমরা আশা করি, ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আমাদের ৪০ শতাংশ জ্বালানি থাকবে। আমরা ১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করেছি।’ তিনি এ প্রসঙ্গে জানান, তার সরকার ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এটি জলবায়ুর ঝুঁকি থেকে টেকসই ও জলবায়ু সমৃদ্ধির পথে যাত্রা। তিনি বলেন, ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ মিয়ানমারের নাগরিক বা রোহিঙ্গাদের কারণে জলবায়ু প্রভাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

জলবায়ু ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি-২০-এর সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮টি দেশের স্বার্থ প্রচার করছি। গ্লোবাল সেন্টার অব অ্যাডাপ্টেশনের ঢাকার দক্ষিণ এশিয়া অফিসের মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিকভাবে সর্বোত্তম অনুশীলন এবং অভিযোজন অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে চলেছি।’ তিনি বলেন, ‘সিভিএফের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ একটি জলবায়ু জরুরি চুক্তির চেষ্টা করছে।’

খবর: বাসস