নাঈম শেখ ও সাকিব আল হাসানের ইনিংস দুটি বাদ দিলে আবারও হতাশার ছবি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। নাঈম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে খেলেছেন ৬৪ রানের ইনিংস। আর সাকিব করেন ৪২ রান। এ দুজন ছাড়া কেবল মাহমুদউল্লাহই যেতে পেরেছেন দুই অঙ্কের ঘরে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষেও তাই সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। নির্ধারিত ২০ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করেছে ১৫৩ রান।
আজ (মঙ্গলবার) ওমানের আল আমিরাত স্টেডিয়ামে স্বাগতিকরা ক্যাচগুলো নিতে পারলে বাংলাদেশের স্কোরের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। কেন বলা হচ্ছে? কারণ বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ সংগ্রাহক যিনি, সেই নাঈম শেখ ‘জীবন’ পেয়েছেন দুইবার। ‘জীবন’ লিটন দাসও পেয়েছিলেন, তবে কাজে লাগাতে পারেননি। অন্যদিকে নাঈম দুর্দান্ত হাফসেঞ্চুরিতে দেখালেন, সুযোগ কীভাবে কাজে লাগাতে হয়।
দারুণ এক হাফসেঞ্চুরি করে ফিরেছেন নাঈম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেয়ে ৫০ বলে করেছেন ৬৪ রান। এই ওপেনার তার ইনিংসটি সাজান ৩ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায়। সপ্তম ওভারে প্রথম ‘জীবন’ পেয়েছিলেন তিনি। বাউন্ডারি সীমানায় যতীন্দর সিং হাতে লাগাতে পারলেও ধরতে পারেননি। উল্টো বল বাউন্ডারি পড়লে ৬ রান পান নাঈম। পরের ওভারে মিড উইকেটে নাঈমের সহজ ক্যাচ ছাড়েন কাশ্যপ প্রজাপতি। ওমান ফিল্ডারদের সৌজন্যে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে দেন বাঁহাতি ওপেনার।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ রান সাকিবের। রান আউট হওয়ার আগে ২৯ বলে ৬ বাউন্ডারিতে করেন ৪২ রান। আর শেষ দিকে ১০ বলে ১৭ রান করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। এছাড়া বাকি সবাই ব্যর্থ। কিছুই করতে পারেননি লিটন দাস (৬), শেখ মেহেদী হাসান (০), নুরুল হাসান সোহান (৩) ও আফিফ হোসেন (১)। আবারও ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ৪ বলে মাত্র ৬ রান করে ফিরে যান। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন তো প্রথম বলেই ফিরে যান খালি হাতে। শেষ ব্যাটার হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান আউট হন ২ রানে। আর তাসকিন আহমেদ অপরাজিত ১ রানে।
ওমানের সবচেয়ে সফল বোলার বিলাল খান। এই পেসার ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রানে নেন ৩ উইকেট। ফায়াজ বাটও পেয়েছেন ৩ উইকেট, তবে ৪ ওভারে তার খরচ ৩০। এছাড়া কলিমউল্লাহ ৪ ওভারে ৩০ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট।
লিটনের ‘দ্বিতীয় জীবন’ টিকলো মোটে এক বল
খেলাধুলায় প্রতিভা যেমন দরকার, তেমনি ভাগ্যও লাগে। ওমানের বিপক্ষে আজ (মঙ্গলবার) মনে হচ্ছিল, ভাগ্যটা সঙ্গে পাচ্ছেন লিটন দাস। রিভিউ নিয়ে একবার বাঁচলেন, তারপর ওমানের ফিল্ডারের সৌজন্যে পেলেন ‘দ্বিতীয় জীবন’। যদিও লিটনের সেই ‘জীবন’ টিকলো মাত্র এক বল!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাঁচা-মরার ম্যাচে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন লিটন। ৭ বলে ৬ রান করে তার ফেরায় বাংলাদেশ হারায় প্রথম উইকেট।
মুখোমুখি প্রথম বলেই আউটের সিদ্ধান্ত দেখতে হয়েছিল লিটনকে। কলিমউল্লাহর বল উইকেটকিপার নাদিম খুশির গ্লাভসে গেলে আম্পায়ার দেন আউট। যদিও রিভিউ নিতে দেরি করেননি লিটন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাট-বলে কোনও সংযোগ হয়নি। রিভিউয়ের সৌজন্যে বেঁচে যান লিটন।
পরের ওভারেই আবার বিপদে পড়তে যাচ্ছিলেন ডানহাতি ব্যাটার। বিলাল খানের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে উড়িয়ে মেরেছিলেন। কাশ্যপ প্রজাপতি বেশ খানিকটা দৌড়ে এসে বল হাতে নিলেও জমাতে পারেননি। ‘দ্বিতীয় জীবন’ পেয়ে যান লিটন। কিন্তু পরের বলেই আউট! বিলালের ইয়র্কার লেন্থের বলে জোড়ালো আবেদন উঠলেও আম্পায়ার সাড়া দেননি। তবে ওমান রিভিউ নিলে আউট লিটন।
‘প্রমোশন’ পেয়ে খালি হাতে ফিরলেন মেহেদী
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, প্রয়োজনে ব্যাটিং অর্ডার পাল্টানো উচিত। তো বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচের শুরুতেই ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে ফেললো! লিটন দাসের বিদায়ের পর ওয়ান ডাউনে নামিয়ে দেওয়া হলো শেখ মেহেদী হাসানকে। কিন্তু ‘প্রমোশন’ পেয়ে পারফরম্যান্সে ‘ডিমোশন’ হলো তার!
ওমানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে রানের খাতায় খুলতে পারেননি মেহেদী। ৪ বলে খেলে ফায়াজ বাটের অসাধারণ রিটার্ন ক্যাচের শিকার ডানহাতি ব্যাটার। স্ট্রেইট ড্রাইভ করেছিলেন মেহেদী। বলে বেশ জোরও ছিল। কিন্তু ফায়াজ লাফিয়ে বল তালুবন্দি করেন।
রান আউটে ফিরলেন সাকিব
দৌড়ালেন, কিন্তু হঠাৎই যেন থেমে গেলেন। খেসারত দিতে হলো সাকিব আল হাসানকে। রান আউট হয়ে ফিরে গেছেন তিনি। নাঈম শেখের সঙ্গে জুটিটা দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলেন, কিন্তু রান আউটে কাটা পড়লেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
২১ রানে পড়লো ২ উইকেট। আশঙ্কার মেঘ জমাট বাঁধতে সময় নিলো না। ওদিকে নাঈম হাসান বারবার যেভাবে আউটের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছিলেন, তাতে শঙ্কা কাটছিলই না। তবে একটু একটু করে ঠিকই পথে ফেরে বাংলাদেশ। নাঈমের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের জুটিতে ছুটতে থাকে বাংলাদেশের রানের চাকা। কিন্তু রান ১০০ পেরোতেই আউট সাকিব।
ইয়র্কার লেন্থের বল থেকে সিঙ্গেলস নিতে সাকিব দৌড়ালেন। কিন্তু ফিল্ডার ফায়াজ বাটের সরসারি থ্রো আঘাত করে স্টাম্পে। সেসময় সাকিব ক্রিজ থেকে অনেক দূরে। দুঃখজনক রান আউটে ফিরতে হয় তাকে। আউট হওয়ার আগে ২৯ বলে ৬ বাউন্ডারিতে বাঁহাতি ব্যাটার খেলেন ৪২ রানের ইনিংস।
হতাশ করলেন সোহান-আফিফ
সুযোগ কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, নাঈম শেখ দেখালেন। ‘জীবন’ পেয়ে ইনিংস টেনে নিয়ে পেয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। তার মাইলফলক ছোঁয়ার পর ফিরে গেছেন নুরুল হাসান সোহান। আফিফ হোসেনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
দুজনই বিগ শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। লং অফে ধরা পড়েন সোহান। আর আফিফ তালুবন্দি হন এক্সটা কাভার বাউন্ডারি সীমানায়।
বাংলাদেশের বর্তমান স্কোয়াডে সবচেয়ে হার্ডহিটার এ দুজনই। যদিও তারা কিছুই করতে পারেননি। ওমানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাত্র ৩ রানে ফিরেছেন সোহান। জিসান মাকসুদের বলে সন্দীপ গৌদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। অন্যদিকে আফিফ শিকার কলিমউল্লাহর। যতীন্দর সিংহের হাতে ধরা পড়ার আগে ৫ বলে করেন মাত্র ১ রান।