প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস-বাফা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এখন বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে একটি ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে। কেবল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা নয়, বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অগ্রণী এই প্রতিষ্ঠানটি এবার গড়লো অনন্য একটি নজির। তারুণ্যের হাতে তুলে দিলো প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব। বাফার নতুন নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন নৃত্যশিল্পী মার্জিয়া স্মৃতি। এ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি একটি চমৎকার সুধী সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।
বাফা’র ব্রঙ্কস কার্যালয়ে আয়োজিত সেই সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, কমিউনিটি নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বাফার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ফরিদা ইয়াসমিন এতদিন নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। অনেকদিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল তরুণদের হাতে তুলে দেয়া হবে পরিচালনার দায়িত্ব। তারই অংশ হিসেবে সুধীজনদের উপস্থিতিতে মার্জিয়া স্মৃতিকে নতুন এই দায়িত্ব দেয়া হলো। বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মাতলুব আলী ফুল দিয়ে মার্জিয়াকে বরণ করে নেন।
বয়সে তরুণ মার্জিয়া এতদিন বাফার নৃত্য বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কাজ করে এসেছেন। একই সঙ্গে তিনি একজন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় নৃত্যশিল্পী এবং কোরিওগ্রাফার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মার্জিয়া স্মৃতির জন্ম ১৯৯৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তার বেড়ে ওঠা। মাত্র ১৪ মাস বয়সে বাবা মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে এতটুকু দূরে সরে যাননি; বরং মনে প্রাণে ধারণ করেছেন।
মা ফরিদা ইয়াসমিনের হাত ধরে তার সাংস্কৃতিক অঙ্গণে প্রবেশ। এরপর ছোটবেলায় দেবাশিষ দাসের কাছে নাচ শিখেছেন। মাসুদুর রহমানের কাছে শিখেছেন ভারতনাট্যম। দ্বীপান্বিতা রায়ও ছিলেন তার শিক্ষক। তবে দীর্ঘ দশ বছর তিনি অনুপ কুমার দাশের কাছে কত্থক শিখেছেন। বাফার প্রযোজনায় উত্তর আমেরিকায় প্রবাসীদের অন্যতম সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল চারটি নৃত্যনাট্য প্রযোজনা করা। তাসের দেশ, চন্ডালিকা, মায়ার খেলা এবং চিত্রাঙ্গদায় তিনি প্রধান চরিত্র রূপায়ন করেন।
কেবল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নয়; বিভিন্ন সামাজিক কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে মূলধারায় নানা কাজেও মার্জিয়া নিজেকে যুক্ত করেছেন। লেখাপড়াতেও ছিলেন ভীষণ উদ্যোমী। ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্স থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিএ করেছেন সাইকোলজিতে। পেশাগত জীবনেও তিনি সফল। বর্তমানে রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট অব ফ্যামিলি অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন এট আলবার্ট আইনস্টাইনের হয়ে কাজ করছেন। চাইল্ড ওবেসিটি কমিয়ে আনার মতো বিষয় নিয়ে তিনি কাজ করছেন।
মার্জিয়া স্মৃতি মেন্টাল হেলথ এর উপর মাস্টার্স করছেন। বাফার নির্বাহী পরিচালক ছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন। নিউইয়র্ক স্টেটের অফিস অব মেন্টাল হেলথ এর কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করছেন। ব্রঙ্কস একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড ড্যান্স এর টিচিং আর্টিস্ট তিনি। এছাড়া মার্জিয়া রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এর ডিরেক্টর অব কালচারাল অ্যাফেয়ার্স। বর্তমানে মার্জিয়া একজন পেশাজীবী মেন্টাল হেলথ থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।
দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর মার্জিয়া স্মৃতি বলেন, ‘দিনে দিনে তিনি নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করেছি। জানি, এখনো অনেক কিছু শিখতে হবে। তবে ভালো কিছু করার চেষ্টা থাকবে সর্বাত্মক। মার্জিয়া বলেন, “দেখুন যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে থেকে অনেকদিন ধরেই কাজ করছি, ফলে সাংগঠনিক অনেক কিছুই আমার জানা হয়েছে। একজন তরুণ হিসেবে আমার উপর যে ভরসাটুকু আপনারা রেখেছেন, তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়ার জন্যই আমি কাজ করে যাবো”।
এরপর প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে তার বিভিন্ন পরিকল্পণার কথাও তুলে ধরেন মার্জিয়া। এসময় মার্জিয়া স্মৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অনেকে। করেন নানা প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে বোঝা গেলো, দায়িত্ব পালনের জন্য অনেকটাই তৈরি তারুণ্যে ভরপুর মার্জিয়া স্মৃতি।