শিশুটির বয়স মাত্র পাঁচ মাস। একরত্তি শিশুকন্যাকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভয়ংকর এক বিরল অসুখে আক্রান্ত সে। এমন এক রোগ, যেখানে ধীরে ধীরে পাথর হয়ে যায় শরীর! যুক্তরাজ্যের শিশু লেক্সি রবিনসের শরীরে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে এ রোগের চিহ্ন।
ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়েছে, বিরল এই রোগের নাম ফাইব্রোডিসপ্লেসিয়া অসিফিকানস প্রগ্রেসিভা। প্রতি ২০ লাখে একজনের এই রোগ হয়। এই অসুখে কঙ্কালের স্বাভাবিক কাঠামোর ওপর অতিরিক্ত হাড় গজায়।
এই রোগে পেশি ও লিগামেন্টের মতো সংযোগকারী টিস্যুর পরিবর্তে হাড় তৈরি হতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে যায় শরীর। নড়াচড়া করা আর সম্ভব হয় না। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন ২০ বছর বয়সের পর থেকে পুরোপুরি বিছানাতেই কাটে। নড়াচড়ার ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে লোপ পায়। ৪০ বছরের বেশি আয়ু হয় না।
বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটির জন্ম হয়েছিল ৩১ জানুয়ারি। সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। তবে তার অভিভাবকরা দেখতে পান, লেক্সি হাতের বুড়ো আঙুলগুলো নাড়াতে পারছে না। তাছাড়া তার পায়ের পাতাও আকারে অনেকটাই বড়। দেরি না করে মেয়েকে তারা দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
গত এপ্রিলে করা এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, শিশুটির পায়ের পাতার উপরে আরও হাড় গজিয়েছে। সেই সঙ্গে বুড়ো আঙুলে দু’টি করে সন্ধিস্থল। সেই কারণেই ওই আঙুল নাড়াতে পারে না শিশুটি।
লেক্সির মা বলেন, এক্স-রের পর আমাদের বলা হয়েছিল, মেয়ের এমন রোগ হয়েছে যে সে হাঁটতে পারবে না। একথা শুনে আমরা অবাক হয়ে যাই। কেননা তার শরীরে তেমন কোনো লক্ষণই যে নেই। দিব্যি সে পা ছুড়ে খেলা করছে, একেবারেই সুস্থ। রাতে ঘুমোয়, সারাক্ষণ হাসিমুখ। তবে কান্না কম। ও যেন এরকমই থাকে, সেটাই আমরা চাই।
ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, লেক্সির যা অবস্থা তাতে সামান্য চোট পেলেই তা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাকে কোনো ইনজেককশন, ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না। দাঁতের পরিচর্যা করাও সম্ভব নয়। এমনকি বড় হলে সে কোনো সন্তান গর্ভে ধারণ করতে পারবে না।
তবে এমন পরিস্থিতিতে হাল ছাড়তে রাজি নন শিশুটির বাবা ও মা। ইতোমধ্যে তারা একাধিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছেন। মেয়ের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে তহবিল সংগ্রহ শুরু করেছেন। সেই টাকায় চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় গবেষণাও চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যদের সচেতন করতে প্রচার শুরু করেছেন ইন্টারনেটে।