শেষ হলো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত পর্বের প্রথম ভাগ। আজ সোমবার প্রচারিত এ পর্বে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রতিযোগী কিশোয়ার চৌধুরীর আয়োজন ছিল পান্তা–‘ইলিশ’ আর আলুভর্তা। যদিও প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের জন্য এমন খাবারের রান্না খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বিচারকেরা তৃপ্তিভরে চেখে দেখেছেন কিশোয়ারের রান্না। দিয়েছেন ১০–এ ১০! আর এ পদ দিয়েই চূড়ান্ত পর্বের দ্বিতীয় ভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন দ্বিতীয় স্থান দখল করে।
সার্ডিন মাছকে অনেকে বাংলাদেশে ইলিশ মাছ বলে চালিয়ে দেয়। কেউ বলে ছোট ইলিশ, কেউ বলে নকল ইলিশ, মেঘনার ইলিশও বলে থাকে কেউ কেউ। অস্ট্রেলিয়াতেও জনপ্রিয় একটি মাছ এই সার্ডিন। তবে কিশোয়ার এ মাছকে সার্ডিন মাছই বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশিদের মনে করিয়েছেন আসল ইলিশের কথা। কেননা, বাংলাদেশ, বাঙালি, বাংলা নববর্ষের সঙ্গে যে খাবার শত শত বছর ধরে জড়িয়ে যে খাবার; সেটা হলো পান্তা-ইলিশ।
অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় রান্নাবিষয়ক রিয়ালিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার অন্তিম পর্বে এটাই বেছে নেন কিশোয়ার। যদিও ইলিশের বদলে সার্ডিন মাছ ব্যবহার করেছেন কিশোয়ার। সঙ্গে ছিল ধূমায়িত পান্তা–ভাত আর আলুভর্তা। এই পদ রাঁধতে বহু আগেই মেয়ের কাছে মনের ভাব জানিয়েছিলেন কিশোয়ারের বাবা কামরুল হোসেইন চৌধুরী। কিশোয়ার যখন বাংলার এই খাবার রান্না করছিলেন, কিশোয়ারের পরিবার ছিলেন মাস্টারশেফের মঞ্চে।
বাবার সঙ্গে কিশোয়ারের মা লায়লা চৌধুরী এবং স্বামী এহতেশাম নেওয়াজ ও দুই সন্তান ছিলেন। বাবার সামনেই বাবার প্রিয় পান্তা-ইলিশ রেঁধেছেন কিশোয়ার। তবে চূড়ান্ত পর্বে এসে এ খাবার রান্না করা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় ছিলেন কিশোয়ার। আত্মবিশ্বাসে ভাটা যে পড়ছিল তাঁর, চেহারায় এর একটা ছাপ ছিল। তবে বিচারকেরা আশ্বস্ত করলেন এই বলে, ‘আমরা এমন খাবারই চাই, যেটা রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় না, ইউনিক খাবার, এমনকি যা আমরা আগে খাইনি।’
এ পর্ব কিশোয়ারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছিল। প্রথম পদ রান্নার জন্য বরাদ্দ সময়ের ৩০ মিনিট চলে গেছে। এটাই মাস্টারশেফের এবারের আসরের শেষ ‘রহস্য বাক্স’ রান্না। সময় আর বাকি ৪৫ মিনিট। বিচারক জক ও অ্যান্ডি এলেন কিশোয়ার কী রান্না করছেন দেখতে। কিশোয়ার জানালেন, হাঁসের মাংসের একটা পদ রান্না করছেন। কিন্তু বিচারক অ্যান্ডি বলে উঠলেন, ‘এই রান্নায় কিশোয়ার কোথায়?’ মানে রান্নাটা মনে ধরেনি বিচারকদের। চেহারায় চরম হতাশা নিয়ে তাঁরা ফিরে যান। কিশোয়ার পড়েন মহাচিন্তায়। বলেন, ‘তাঁরা সত্য বলেছেন। আমি যখন তাঁদের সামনে খাবার রাখব, তাঁরা সেই খাবারে আমাকে দেখতে পাওয়ার কথা। আমি চাই, তাঁরা যেন খাবার দেখেই বুঝতে পারেন, এটা আমি রান্না করেছি।’ কথা রেখেই কিশোয়ার সিদ্ধান্ত নেন চলতি রান্না বাদ দিয়ে তিনি বিচারকদের জন্য নতুন খাবার রান্না করবেন।
কিশোয়ার পান্তা-ইলিশ বিচারকের সামনে রেখে বলে ওঠেন, ‘এটা এমন একটি খাবার, যা কোথাও কোনো রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় না। তবে আমার ফাইনাল খাবার হিসেবে এটি রান্না করতে পারাটাই আমার জন্য অনেক আনন্দের।’
কিশোয়ারের এ পদটি রান্নার জন্য তিন বিচারকই ১০–এ ১০ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন কিশোয়ার। আধা-কাঁচা কোয়েল রান্না করে কম পয়েন্ট পেয়েও ফাইনালের আগের বাড়তি পয়েন্ট নিয়ে ৫৩ স্কোর করে প্রথম স্থানে আছেন পিট ক্যাম্পবেল। আর ৫০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন জাস্টিন নারায়ণ।
এর আগের পর্বে কিশোয়ার বাজিমাত করেন নেহারি, কিংফিস আর মিষ্টান্নে পান দিয়ে আইসক্রিম—যার নাম ‘আফটার ডিনার মিন্ট’ বানিয়ে।