বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ১৮ আগস্ট রাতের ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। একই সঙ্গে ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানান তিনি।
শনিবার সন্ধ্যার পর নগরীর কালীবাড়ি রোডের নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র এসব দাবি জানান।
তিনি বলেন, সত্য চাপা রাখা যাবে না। সত্য উদ্ঘাটিত হবেই। আগেই বলেছি আমি যদি অন্যায় করি মেয়রের চেয়ারে বসার অধিকার নেই। আমি আওয়ামী লীগ দল করি। আমার কারণে দলের কোনো ক্ষতি হলে দল ছেড়ে চলে যাব। সেদিন রাতের পুরো ভিডিওটা আমি দেখতে চাই। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। তদন্তে অপরাধী প্রমাণিত হলে মেয়রের পদ ছেড়ে দেব।
গ্রেফতারের আশঙ্কার বিষয়ে মেয়র বলেন, পালিয়ে যাবো না, গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত আছি। বললেই থানায় হাজির হবো। আমার বাসা ঘেরাও করার দরকার নেই। আমি পরিচিত লোক, দলের সাধারণ সম্পাদক, আমার মুখ সবাই চেনেন।
তিনি বলেন, এটি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি। এই বাড়ির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে। ব্যানার অপসারণের প্রশ্নে মেয়র বলেন, ব্যানার লাগানো দলের সিদ্ধান্ত ও অপসারণও দলের সিদ্ধান্ত। এটা দলের ব্যানার, ইউএনও সরকারি চাকরি করেন, বাধা দেওয়ার কেউ না।
পুলিশ প্রশাসনকে বিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অভিযান না চালানোর অনুরোধ জানান মেয়র। তাদের বাড়িতে অভিযান চালালে তারা কোনোভাবে কাজ করতে পারবেন না। এতে দুর্ভোগে পড়বে নগরবাসী। তারা যাতে নগরবাসীর সেবা করতে সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ সময় নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে বিসিসির কর্মীদের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের নির্দেশ দেন মেয়র।
মেয়র বলেন, আপনারা যারা আন্দোলন করছেন তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করুন। মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করা বিসিসি কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মেয়র। এ ছাড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন স্থানে যারা আন্দোলন করছেন তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে বলেন।
বিভিন্ন কর্মসূচি পালনকারীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, শোকের মাসে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। দলের বাইরে গিয়ে কাজ করলে দলেরই ক্ষতি হবে। তিনি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং ওই দিনের ঘটনার সম্পূর্ণ ভিডিও প্রকাশ করে অপরাধীদের দেখে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। এ ঘটনায় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের দুই নেতার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান মেয়র।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমি বারবার বলেছি ষড়যন্ত্রের কথা। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিন বছরের ষড়যন্ত্র চলাকালে একনেকে ১৩০ কোটি টাকা পাস হলেও পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ না পেয়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় পাঁচ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করছি। কোনোভাবেই ঠেকাতে না পেরে এসব প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নগরীর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রসঙ্গে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন দেখে আমার চোখে পানি চলে আসে। তারা আমাকে ভালোবেসে গ্রেফতার আতংক উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছেন।
তিনি নগরীর বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পরিচ্ছন্নকতার্মীদের অনুরোধ জানান। পাশাপাশি সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসায় বাসায় গিয়ে হয়রানি না করারও অনুরোধ জানান।
ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলায় গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন কি না জানতে চাইলে সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রস্তুত আছি। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমি পরিচিত লোক। আমাকে বাংলাদেশের মানুষ চেনেন। আমি পালিয়ে যাব না। আমাকে বললেই থানায় গিয়ে হাজির হবো।’