রাজধানীতে এক ট্রাফিক সার্জেন্টের উদ্দেশে চীনা নাগরিকের টাকা ছুড়ে মারার যে ঘটনা ঘটেছিল, সেটির তদন্তে নেমে প্রাথমিকভাবে ওই সার্জেন্টের কোনো দোষ পায়নি পুলিশ। ওই সার্জেন্ট কিংবা ট্রাফিক সদস্যরা কোনো টাকা চাননি, শুধু গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখছিলেন। কিন্তু ওই চীনা নাগরিক বিনা কারণে মেজাজ হারিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার সাহেদ আল মাসুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চীনা নাগরিকের গাড়ির চালকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তার বক্তব্যেও কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ও অন্য ট্রাফিক সদস্যের কোনো দোষ পাওয়া যায়নি। আমাদের তদন্তেও এখন পর্যন্ত কর্তব্যরত ট্রাফিক সদস্যের কোনো ধরনের গাফিলতি বা অপরাধ পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে ওই চীনা নাগরিককে ডাকা হয়েছে। ঘটনার পর এ বিষয়ে আমরা ডিএমপির কাফরুল থানায় একটি জিডি করেছি। সেদিন কী ঘটেছিল, তা জানতে আমরা তদন্ত করছি।

গত মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাওয়া ক্লাবের সামনে এক চীনা নাগরিক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে টাকা ছুড়ে মারেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশকে উদ্দেশ করে চীনের ওই নাগরিক বারবার বলছেন, ‘ইউ ওয়ান্ট মানি, আই গিভ ইউ দিস…মানি’ এই বলে তিনি টাকা ছুড়ে মারেন। এ সময় তাকে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতেও শোনা যায়।

উপকমিশনার বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্তে জানতে পেরেছি- ওই চীনা নাগরিক একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ঘটনার দিন তিনি একটি প্রাইভেটকারে অফিসে যাচ্ছিলেন। রাওয়া ক্লাবের সামনে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট তার গাড়ি থামিয়ে চালকের কাছে কাগজপত্র দেখতে চান। চালক কাগজ দেওয়ার পর সার্জেন্ট- তা পরীক্ষা করে দেখছিলেন। এর মধ্যেই ওই চীনা নাগরিক বিনা কারণে উত্তেজিত হয়ে টাকা ছুড়ে মারেন।

কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কোনো টাকা চেয়েছিলেন কিনা- জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্টের বুকে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’ ছিল। ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও এবং অডিওতে আমরা এ ধরনের কোনো তথ্য পাইনি। এ ছাড়া ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত জনতা কেউই এ ধরনের কথা বলেনি।

উপকমিশনার বলেন, ওই চীনা নাগরিকের সেদিনের গাড়িচালককে ডাকা হয়। তিনিও আমাদের বলেছেন- কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা শুধুমাত্র গাড়ির কাগজ দেখতে চেয়েছিলেন। গাড়ির কাগজ পরীক্ষা করতে দুই-তিন মিনিট যে সময় লাগে, তা শেষ না হওয়ার আগেই ওই চীনা নাগরিক গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। গাড়ি থেকে নেমে তিনি বিনা কারণে উত্তেজিত হয়ে এ ঘটনা ঘটান। আগে বা পরে গাড়ির চালক ব্যতীত কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ওই চীনা নাগরিকের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

সাহেদ আল মাসুদ আরও বলেন, ওই চীনা নাগরিকের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তিনি লিখিতভাবে এই ঘটনার কারণ দর্শাবেন এবং ক্ষমা চাইবেন।