স্মৃতির পাতায় ইনিংসটি সাজিয়ে রাখবেন মোহাম্মদ সামি। আসল কাজ বোলিং হলেও ক্রিকেটের তীর্থ লর্ডসে ব্যাটসম্যান হয়ে উঠলেন তিনি। ইংলিশ বোলারদের রীতিমতো শাসন করে করলেন অপরাজিত হাফসেঞ্চুরি। কম যাননি জসপ্রীত বুমরাও। সমানতালে লড়ে দলকে এনে দিলেন বড় সংগ্রহ। এরপর বল হাতে নিয়ে এই দুই পেসার ভারতকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত সূচনা। সামি আর সাফল্য না পেলেও বুমরার সঙ্গে মোহাম্মদ সিরাজের বিষাক্ত পেসে এলোমেলো ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। সমান্তরালে ভারত পেলো স্মরণীয় এক জয়।

স্মরণীয় বটে। দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ভারত হয়তো ভাবছিল ‍টার্গেট সহজ হয়ে গেলো ইংল্যান্ডের। কিন্তু না, সামি-বুমরা জুটি এতটাই দাপট দেখালো যে ভারত আর উইকেটই হারালো না! ফলে ওই ৮ উইকেটেই ২৯৮ রানে ইনিংস ঘোষণার করে দিলেন বিরাট কোহলি। ইংল্যান্ডকে লক্ষ্য দিলেন ২৭২ রানের। শেষ দিনের প্রায় দুই সেশনে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না স্বাগতিকদের। জয় না হোক, ড্র অন্তত করতে পারতো জো রুটরা। কিন্তু ভারতীয় পেসারদের তোপে দাঁড়াতেই তো পারলো না! দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১.৫ ওভারে ১২০ রানে স্বাগতিকদের অলআউট করে ভারত ১৫১ রানের বিশাল জয়ে সিরিজে পেলো ১-০ ব্যবধানের লিড।

প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিল। লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিনের নাটকীয়তায় ভারত দেখিয়ে দিলো তাদের শক্তি। লেজের দিকের খেলোয়াড়দের ‘ব্যাটসম্যান’ হয়ে ওঠা ও ইংলিশ কন্ডিশনে তাদের পেসারদের সামর্থ্য বিদেশের মাটিতে আরেকবার বাজিমাত কোহলির ভারতের।

৬ উইকেটে ১৮১ রানে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিল ভারত। ঋষভ পান্ত (২২) শুরুতেই ফিরে যান। আরেক ব্যাটসম্যান ইশান্ত শর্মা ফেরেন ১৬ রানে। এরপরই শুরু সামি-বুমরার ম্যাজিক। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করে সামি পেয়ে যান টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। মঈন আলীকে ছক্কা মেরে মাইলফলক ছোঁয়া এই ব্যাটসম্যান ৭০ বলে অপরাজিত থাকেন ৫৬ রানে। আর বুমরা ৬৪ বলে অপরাজিত ছিলেন ৩৪ রানে।

ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও জাদু দেখান তারা। রানের খাতা খোলার আগেই দুই ইংলিশ ওপেনারকে তুলে নেন দুই পেসার। বুমরার বলে ঘায়েল রোরি বার্নস। আর সামির পেসে কাটা পড়েন ডম সিবলি। এরপর বুমরাহ, সিরাজ ও ইশান্ত শর্মার তোপে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের শুধুই আসা-যাওয়া।

প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা অধিনায়ক রুট চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেননি। ৩৩ রান করে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান করেছেন জস বাটলার। ১৩ রান আসে মঈন আলীর ব্যাট থেকে। এই তিনজন ছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে আর কোনও ব্যাটসম্যান যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে।

স্মরণীয় জয়ে সবচেয়ে বেশি সফল সিরাজ। জেমস অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে জয় নিশ্চিত করা এই পেসার ৩২ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। বুমরা ৩৩ রান খরচায় পান ৩ উইকেট। আর ইশান্ত মাত্র ১৩ দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট।

বোলাররা অসাধারণ পারফর্ম করলেও ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে লোকেশ রাহুলের হাতে। প্রথম ইনিংসে তার করা ১২৯ রানে ভর করেই ভারত পেয়েছিল ৩৬৪ রানের সংগ্রহ। জবাবে রুটের হার না মানা ১৮০ রানের ইনিংসে ইংল্যান্ড করেছিল ৩৯১ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৩৬৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৯.৩ ওভারে ২৯৮/৮ (ডিক্লে.) (আজিঙ্কা রাহানে ৬১, মোহাম্মদ সামি ৫৬*, চেতেশ্বর পূজারা ৪৫, জসপ্রীত বুমরা ৩৪*; মার্ক উড ৩/৫১, ওলি রবিনসন ২/৪৫, মঈন আলী ২/৮৪)।

ইংল্যান্ড: ৩৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১.৫ ওভারে ১২০ (জো রুট ৩৩, জস বাটলার ২৫, মঈন আলী ১৩; মোহাম্মদ সিরাজ ৪/৩২, জসপ্রীত বুমরা ৩/৩৩, ইশান্ত শর্মা ২/১৩)।

ফল: ভারত ১৫১ রানে জয়ী।

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ভারত ১-০তে এগিয়ে।

ম্যাচসেরা: লোকেশ রাহুল।