সরকারি সেবাখাত ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে এ সম্পর্কিত একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ সম্পর্কে বলেন , ‘যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও সরকারি বিভিন্ন সেবাখাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

তিনি আরও বলেছেন, যারা টিকার ডোজ নিতে ইচ্ছুক নন, তারা যেন নিয়মিত করোনা টেস্ট করানো, সামাজিক দূরত্ববিধি, নিয়মিত মাস্ক পরা ও ভ্রমণ বিষয়ক সীমাবদ্ধতা মেনে চলেন।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য টিকার ডোজ নেওয়া বাধ্যতামূলক- এমন কোনো ইঙ্গিত প্রেসিডেন্ট দেননি। এছাড়া, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকার ডোজ না নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন শঙ্কাও নেই।’

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই রোগ আক্রান্ত ও মৃতের হিসেবে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত গত প্রায় দেড় বছরে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫৫২ জন এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৮ জন।

এছাড়া, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু ও আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠাদের সংখ্যার তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৫২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৬ জন।

গেল জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর গণটিকাদান কর্মসূচির ওপর জোর দেন এবং ঘোষণা করেন, ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের আগে দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সে লক্ষ্য অবশ্য পূরণ না হলেও দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গেছে।
এরপরও করোনায় দৈনিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ভারতীয় ডেলটা ধরন নতুন করে ছড়াতে থাকায় নাগরিকরদের আবার মাস্ক পরেতে বলেছে সিডিসি।

ফেডারেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মে এবং জুন মাসে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জুলাই থেকে আবার ঊর্ধ্বমূখি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত-মৃত্যুর হিসেবে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, যে স্টেটগুলোতে টিকাদান তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে, সেসব স্টেটে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

বুধবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ ও চিকিৎসা বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৬৭ শতাংশ প্রশাসনিক অঞ্চল বা কাউন্টিতে করোনায় দৈনিক সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়ছে। আগের দিন মঙ্গলবার এই হার ছিল ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

গত ২৬ জুলাই এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চিকিৎসা বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. অ্যান্থনি ফাউসি এ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আপনি যদি দেশের সাম্প্রতিক আক্রান্ত রোগীদের ব্যাপারে খোঁজ খবর করেন, তাহলে দেখবেন- তাদের বেশিরভাগই করোনা টিকার একটি ডোজও নেননি। তাছাড়া এমন রোগীও প্রচুর পাওয়া যাবে, যারা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেননি।’

‘অর্থাৎ, মহামারি এখন ছড়াচ্ছে কিংবা বলা যায়, দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে জনসংখ্যার সেই অংশের মধ্যে, যাদের এখনও টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্ববৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন দ্য আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিএলও)- এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ট্রামকা রয়টার্সকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে এএফএল-সিএলও।

রিচার্ড ট্রামকা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এখন সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, তাতে আপনি যদি টিকার কোনো ডোজ না নেন, তাহলে শুধু আপনি নন, আপনার কর্মস্থলের সবাই ঝুঁকিতে থাকবেন।’

সূত্র : রয়টার্স