বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রজেক্টের নামে ভুয়া কার্যাদেশ তৈরি করে ৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রাজধানীর গুলশান ও খিলগাঁও এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের মূল হোতা আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন (৪৮), প্রজেক্ট ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম (৪৬), পরিচালক প্রশাসন ইমরান হোসাইনকে (৪৪) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারের (কার্যাদেশ) কপি, সাপ্লায়ারদের সঙ্গে স্ট্যাম্প চুক্তিপত্রের কপি, ১০ কোটি টাকার কাবিনের ফটোকপি।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মালিবাগ প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।
তিনি বলেন, অভিযোগে জানা যায়—গুলশানের আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে অ্যাকটিভ ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছেন এমন তথ্য প্রচার করে বিভিন্ন সাপ্লায়ারদের সাব কনট্রাক্টে কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়। এ চক্রের মূল হোতা আলমগীর হোসেন জাপানের ওয়াবিয়াছি করপোরেশন থেকে সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের ৩০০ কোটি সিএফটি বালু সাপ্লাইয়ের জন্য ২০২১ সালের মার্চে ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে বলেও প্রচারণা চালানো হয়।
এর প্রেক্ষিতে সে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৩০০ আগ্রহী সাপ্লায়ার সংগ্রহ করে। ১ সিফটি বালুতে দশ টাকা লাভ হবে বলা হয়। সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে কাউকে ২ কোটি সিএফটি, কাউকে ৫ কোটি, কাউকে ১০ কোটি সিএফটি, কাউকে ২০ কোটি সিএফটি বালু ভরাটের কাজ সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়ার চুক্তি করে এবং কমিশন হিসেবে একেকজনের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ লাখ টাকা নিয়েছে। এভাবে ৩০০ সাপ্লাই এজেন্সির মালিকদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছে চক্রটি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রজেক্ট এলাকায় সাপ্লায়ারদের নিয়ে ‘প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজের কাজে বালু সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্টের উদ্বোধন’ লেখা ব্যানার টাঙ্গিয়ে যমুনা সেতুর পাশে লাল গালিচা বিছিয়ে ধুমধাম করে কাজ উদ্বোধন করে প্রতারকরা। এ অনুষ্ঠানে নামিদামি অনেক ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা যায়। এরপর টাঙ্গাইল এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক সাপ্লায়ার কাজ পাবার আশায় আলমগীরের অফিসে যোগাযোগ করে লাখ লাখ টাকা কমিশন দিয়ে কাজের চুক্তিপত্র করে। এভাবেই জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণামূলকভাবে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। সাপ্লায়াররা বালু ফেলার জন্য আল তাকদীরে’র চেয়ারম্যান আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ও অফিস বন্ধ পেয়ে বুঝতে পারে তারা প্রতারিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগীরা সিআইডিতে এসে অভিযোগ জানায়।
অভিযানের সময় বিভিন্ন সাপ্লায়ারের সঙ্গে স্ট্যাম্প চুক্তিপত্রের কপি এবং ১০ কোটি টাকা কাবিনে নিকাহনামার ফটোকপি পাওয়া যায়। ব্যাংক লেনদেনের সূত্র ধরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে আলমগীরের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে এবং ওই নারী নিজে গ্যারান্টার হয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকার এলসি বারোশো কোটি টাকার ক্যাশ দিবে বলে আলমগীরকে আশ্বস্ত করে। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই ১০ কোটি টাকার কাবিনে ২০২১ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় বিয়ে করে আলমগীর। পরে মনোমালিন্য হলে ২০২১ সালের নভেম্বরে আলমগীরকে ডিভোর্স দিয়ে দেনমোহরের আদায়ের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করে ওই নারী।
এর আগেও আলমগীরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রতারণার মামলা হয়। নয়াপল্টনে বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল নামে ট্রাভেল এজেন্সি খুলে সৌদি আরবের জাল ১৫০টি ভিসা নিয়ে প্রতারণা করে একজন রিক্রুট এজেন্সির মালিক জনৈক সালাউদ্দিনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার ও প্রতারণার অভিযোগে ডজনখানেক মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।