সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিমানঘাঁটিটি ছিল আমেরিকান সামরিক অভিযান পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু, প্রায় দুই দশক পর সেই বাগরাম বিমানঘাঁটি ছেড়ে শুক্রবার চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটোর সেনারা।
আফগানিস্তানে প্রায় ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় সামরিক ঘাঁটি ছিল বাগরাম। আমেরিকান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার বাগরাম বিমানঘাঁটিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে জঙ্গি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালালে সামরিক আগ্রাসনে ক্ষমতাচ্যুত হয় তখন সরকারে থাকা তালেবান। এরপর বিশ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর লড়াই চলছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানদের সঙ্গে হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবেই বাগরাম বিমানঘাঁটি খালি করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়বে সব আমেরিকান সেনা।
গত বিশ বছরেও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর কাছে পরাস্ত হয়নি তালেবান। ট্রাম্পের শাসনামলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হওয়া তালেবানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচু্ক্তির অংশ হিসেবেই বাগরাম বিমানঘাঁটি খালি করে দেওয়া হয়েছে।
এক পর্যায়ে এই বিমানঘাঁটিতে এক লাখেরও বেশি আমেরিকান সেনা ছিল।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মে মাসের মধ্যে সব সেনা প্রত্যহারের কথা থাকলেও নয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে গত এপ্রিলে ঘোষণা দিয়েছিলেন, মে মাস নয়, ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়বে সব মার্কিন সেনা।
এরপর মে থেকে আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করেন আমেরিকান ও ন্যাটো সেনারা। বাগরাম বিমানঘাঁটি খালি করে দেওয়ার খবর জানিয়ে বিবিসি লিখেছে, এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার আসন্ন।
বাগরাম বিমানঘাঁটি থেকে বিদেশি সেনা এমন সময়ে চলে যাচ্ছে যখন সেনা প্রত্যাহারের কারণে সশস্ত্রগোষ্ঠী তালেবান গোটা আফগানিস্তানের দখল নিতে প্রচেষ্টা শুরু করেছে। দেশটিতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিবিসি আরও বলছে, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরের বাগরাম বিমানঘাঁটি থেকে বিদেশি সেনা এমন সময়ে চলে যাচ্ছে যখন সেনা প্রত্যাহারের কারণে সশস্ত্রগোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানের বিভিন্ন অংশের দখল নিতে শুরু করেছে।
তালেবান ও আল-কায়েদার সঙ্গে লড়াইয়ের এক পর্যায়ে এই বিমানঘাঁটিটিতে এক লাখেরও বেশি আমেরিকান সেনা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সেনারা সরে যাওয়ায় ঘাঁটিটি এখন আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আফগান বাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কবে এই বিমানঘাঁটি হস্তান্তর করা হবে, সে সম্পর্কে আমেরিকান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা কিছু বলেননি। আফগান সরকারও জানিয়েছে, বিমানঘাঁটিটি আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) শুক্রবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকান কূটনীতিকদের সুরক্ষা প্রদান ও কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সুরক্ষায় এখনো আফগানিস্তানে প্রায় ৬৫০ জন মার্কিন সেনা থাকবে।