যুক্তরাজ্যের একটি বাস স্টপে সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল দেশটির প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত অতি গোপনীয় নথির। এক ব্যক্তি সেই নথি পেয়ে তা তুলে দেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির হাতে। এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ব্রিটেনের সরকার।

ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার। দক্ষিণ পূর্ব লন্ডনের কেন্ট বাস স্টপের পেছনে প্রায় অর্ধশত পৃষ্ঠার নথি খুঁজে পান এক ব্যক্তি। পরে তিনি যোগাযোগ করেন ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেগুলো তুলে দেন সংবাদমাধ্যমটির হাতে।

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর সামরিক অভিযান সমাপ্তির পরও দেশটিতে যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য সামরিক উপস্থিতির বিস্তারিত পরিকল্পনার উল্লেখ রয়েছে এতে। তবে সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয়টি রাশিয়াকে নিয়ে।

গত সপ্তাহে রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে আকস্মিকভাবে হাজির হয় ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস ডিফেন্ডার। এতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেই সংক্রান্ত সংবেদনশীল আলোচনা ছিল নথিতে। বিবিসির বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এপি।

এদিকে, নথি প্রকাশের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টিকে তারা ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে নথিগুলো হারানোর বিষয়ে গত সপ্তাহেই তারা অবহিত হয়েছিল বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এই ঘটনায় ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনও সরব হয়ে উঠেছে। দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি এটিকে মন্ত্রীদের জন্য লজ্জাকর ও উদ্বেগজনক হিসেবে অভিহিত করেছে। দলটির প্রতিরক্ষা নীতি বিষয়ক প্রধান জন হিলি বলেন, মন্ত্রীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে- তারা জাতীয় নিরাপত্তাকে খাটো করে দেখেন না। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নথিতে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ ডিফেন্ডার সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু ইমেইল ও পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন রয়েছে। চলতি মাসে জাহাজটি ক্রিমিয়ান উপদ্বীপ নোঙ্গর করে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে অঞ্চলটি দখল করে নেয় মস্কো। যদিও ব্রিটেনসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অধিভুক্ত হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।

গত বুধবার রাশিয়া জানিয়েছে, ব্রিটিশ জাহাজটিকে তাড়া করে তারা সতর্কতামূলক গুলি ও বোমা বর্ষণ করেছিল। যদিও এমন তথ্য অস্বীকার করে ব্রিটেন বলেছে, রাশিয়ার জলসীমা নয়, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন মেনে ইউক্রেনের জলসীমানা অতিক্রম করেছিল ডিফেন্ডার। এই ঘটনায় মস্কো ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকেও তলব করেছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, গোপন নথির তথ্য অনুযায়ী রাশিয়া কড়া প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে সেটি জেনেই জাহাজটি পাঠিয়েছিল ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দফতর।