মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার ফলে বিশ্ববাজারে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে স্বর্ণের দামে। বিশ্লেষকদের ধারণা ছিলো আগামী বছর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে যাবে। তবে চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৭০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দুই হাজার ৭০০ ডলার অতিক্রম করার পর শনিবার (১৯ অক্টোবর) স্বর্ণের দাম বেড়েছে আরও। এদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় স্বর্ণের দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি হয়েছে দুই হাজার ৭২৪.৭ ডলারে। একদিনের ব্যবধানে প্রতি আউন্সে প্রায় ১৩ ডলার বেড়েছে স্বর্ণের দাম।

চলতি বছরের জুন মাস থেকে সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়। গত ৭ জুন প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ২৯৩ ডলার। এরপর দফায় দফায় দাম বেড়ে ১৬ জুলাই প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৪৬৮ ডলারে ওঠে।

অবশ্য এখানেই সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা থামেনি। এরপরও সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা চলতে থাকে। গত ২০ সেপ্টেম্বর ইতিহাসে প্রথমবার প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৬০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে। এই রেকর্ড গড়ার পরও সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৬৮২ ডলার পর্যন্ত ওঠে। এই রেকর্ড দাম হওয়ার পর কমার প্রবণতা দেখা যায়। কয়েক দফায় দাম কমে ১ অক্টোবর প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৬৩১ ডলারে নেমে আসে। এরপর কয়েক দফায় সোনার দামে উত্থান-পতন হলেও দাম কমার পাল্লাই ভারী হয়। এতে ১০ অক্টোবর লেনদেনের একপর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৬০৬ ডলারে নেমে যায়।

এই মূল্য সংশোধনের পর ১০ অক্টোবর লেনদেনের শেষদিকে আবার সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়। যা অব্যাহত থাকে সপ্তাহজুড়েই। এতে গত সপ্তাহের লেনদেন শেষে প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭২১ ডলারে। গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হওয়ার আগে প্রতি আউন্স সোনার দমি ছিল ২ হাজার ৬৫৭ ডলার।

এ হিসাবে গত সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৬৪ ডলার বা ২ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষদিন প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪৮ ডলার বা ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এতে মাসের ব্যবধানে সোনার দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে সোনার এই দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারে যে কোনো সময় সোনার দাম বাড়ানো হতে পারে বলে বাজুসের একজন দায়িত্বশীল সদস্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে যে হারে সোনার দাম বেড়েছে, তাতে দেশের বাজারে দাম অবশ্যই বাড়াতে হবে। বাজুসের সংশ্লিষ্ট কমিটি বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে।

এদিকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমার মধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারেও কিছুটা কমানো হয়। সে সময় সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২০১ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ৮৭৪ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে এ দামেই দেশের বাজারে সোনা বিক্রি হচ্ছে।

এই দাম কমানোর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর সব থেকে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৩ হাজার ৪৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৮৯৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।