বিস্ফোরক দ্রব্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সংকটের কারণে দেশের একমাত্র দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনির পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে।
শনিবার সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় পাথর খনির পাথর উত্তোলন।
দেশে পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরক সংকটের কারণে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন সরকারের লোকসান হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা এবং সরকারি উন্নয়ন কাজে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ পাথর সংকটে পড়ে চলমান নির্মাণ কাজ ব্যাহতের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া পাথর আমদানি করে সংকট মোকাবেলায় সরকারের বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার সকাল থেকে খনি থেকে পাথর উৎপাদন ও উন্নয়ন কাজে প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক দ্রব্য (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) মধ্যপড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জিটিসিকে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করতে না পারায় পাথর উৎপাদন এবং উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে পাথর খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)।
জানা যায়, পাথর উত্তোলন কাজের জন্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। চুক্তি অনুযায়ী খনি কর্তৃপক্ষ সময়মত জিটিসিকে চাহিদা মাফিক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরবরাহ করবে। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে খনি কর্তৃপক্ষ (এমজিএমসিএল) অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জিটিসিকে চুক্তি মোতাবেক সময়মত সরবরাহ করতে পারেনি।
পাথর খনি শ্রমিকরা জানায়, খনিতে বিস্ফোরক দ্রব্য (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) মজুদ না থাকায় খনির অভ্যন্তরে বোমা ব্লাস্টিং এর কাজ বন্ধ থাকার কারণে খনি থেকে পাথর উত্তোলন কাজ বন্ধ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি। এ কারণে তাদের সাময়িক ছুটি প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লি.-এর মহা-ব্যাবস্থাপক (মাইনিং) আবু তালেব ফরাজি জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সময় মতো বিস্ফোরক দ্রব্য (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) আমদানি করা সম্ভাব হয়নি। তবে বিস্ফোরক দ্রব্য আমদানির কাজ চলমান। থাইল্যান্ড থেকে এর চালান আসছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে খনিতে বিস্ফোরক দ্রব্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।
পাথরখনি সূত্রে জানা যায়, মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোডিয়াম জিটিসি”র সাথে আগামী ছয় বছরের পুনঃচুক্তি করেন মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লি. (মধ্যপাড়া পাথর খনি) কর্তৃপক্ষ। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি। কিন্তু পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত বিস্ফোরক দ্রব্য শেষ হয়ে যাওয়ায় শনিবার সকাল থেকে খনির পাথর উত্তোলন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে এবং খনির রক্ষণাবেক্ষণ সচল রাখতে জিটিসিকেও লোকসান গুনতে হয়।
এদিকে, এই বিস্ফোরক দ্রব্য আমদানি করতে অনেক দেরী হলে খনি উন্নয়ন এবং উৎপাদন বন্ধ থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে খনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন।