দারুণ দুটি গোলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ইতালি বিরতির আগে ছোট্ট একটা ভুল করে বসল। ব্যবধান কমিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা জাগাল বেলজিয়াম। তবে অদম্য ইতালিয়ানদের প্রতিরোধ আর ভাঙতে পারল না তারা। রোমেলু লুকাকু-কেভিন ডে ব্রুইনেদের স্বপ্ন ভেঙে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে পা রাখল রবের্তো মানচিনির দল।

মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শুক্রবার রাতে দ্বিতীয় কোয়ার্টার-ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে ইতালি। নিকোলো বারেল্লার গোলে দলটি এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান বাড়ান লরেন্সো ইনসিনিয়ে। বেলজিয়ামের ব্যবধান কমানো গোলটি করেন লকাকু।

বাছাইসহ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে এই নিয়ে টানা ১৫ ম্যাচ জিতল ইতালি, প্রতিযোগিতার ইতিহাসে যা নতুন রেকর্ড। এই হারের আগে টানা ১৪ ম্যাচ জিতেছিল বেলজিয়াম।

গত আসরের কোয়ার্টার-ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল ইতালি। পরে রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাই পেরুতে ব্যর্থ হয়েছিল তারা। মানচিনির কোচিংয়ে নিজেদের ইতিহাসের সেই কঠিনতম ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো ইতালি আজ হয়ে উঠেছে অজেয়। ২০১৮ সালে নেশন্স লিগে পর্তুগালের বিপক্ষে হারের পর আর তারা পায়নি সেই তেতো স্বাদ। আগের ম্যাচেই অপরাজেয় পথচলার নতুন রেকর্ড গড়া দলটি এই নিয়ে ৩২ ম্যাচ রইল অজেয়।

র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরাদের আটকাতে কৌশল পাল্টাবেন কি-না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মানচিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন আরও আগ্রাসী খেলবে তারা। ম্যাচেও ফুটে উঠল তাই। বল দখলে আধিপত্য করা দলটি গোলের উদ্দেশে মোট ১৪টি শট নেয়, যার তিনটি ছিল লক্ষ্যে। আর বেলজিয়ামের ১০ শটের চারটি লক্ষ্যে ছিল।

চোটের কারণে এদেন আজারকে এই ম্যাচে পায়নি বেলজিয়াম। চোট শঙ্কা দূর করে মাঠে নামা ডে ব্রুইনে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেন। ডি-বক্সে খুঁজে নেন লুকাকুকে। তবে বল ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি গ্রুপ পর্বে তিন গোল করা স্ট্রাইকার।

ত্রয়োদশ মিনিটে ইতালির প্রথম আক্রমণেই লিওনার্দো বোনুচ্চি জালে বল পাঠান। তবে ভিএআরের সাহায্যে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। আট মিনিট পর দারুণভাবে বল নিয়ে ঢুকে ডি-বক্সের মুখ থেকে ডে ব্রুইনের নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে ফেরান গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুমা।

৩১তম মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে দলকে এগিয়ে নেন বারেল্লা। গোলটির পেছনে যথেষ্ট দায় আছে বেলজিয়ামের রক্ষণে। আক্রমণের প্রথম ধাক্কা ঠেকিয়ে দিয়ে ডি-বক্সের বাইরেই আবার বল হারিয়ে ফেলে তারা। এরপর ডি-বক্সে বল পেয়ে দুই জনের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে জোরালো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেন ইন্টার মিলান মিডফিল্ডার।

তাদের ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলটি আরও সুন্দর। ৪৪তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বাঁ দিক দিয়ে উঠে একজনকে কাটিয়ে সামনে এগিয়ে প্রায় ২২ গজ দূর থেকে অসাধারণ এক শটে বল জালে পাঠান ইনসিনিয়ে। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি থিবো কোর্তোয়া।

শক্ত অবস্থানে থেকে বিরতিতে যেতে পারত ইতালি। কিন্তু ভুল করে বসেন জিওভানি দি লরেন্সো। এই ডিফেন্ডার বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢোকা প্রতিপক্ষের তরুণ ফরোয়ার্ড জেরেমি দোকুকে ধাক্কা দিলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পট কিকে স্কোরলাইন ২-১ করেন লুকাকু।

৬১তম মিনিটে গোলমুখে লুকাকুর অবিশ্বাস্য ব্যর্থতায় হতাশা বাড়ে বেলজিয়ামের। বাঁ দিক দিয়ে বারবার ইতালির রক্ষণে ভীতি ছড়ানো দোকু ডি-বক্সে খুঁজে নেন ডে ব্রুইনেকে। ম্যানচেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডার নিজেই পারতেন শট নিতে, কিন্তু আরও নিশ্চিত হতে তিনি বল বাড়ান লুকাকুকে। ওখানে ছোট একটা টোকার দরকার ছিল, দিলেনও তিনি; কিন্তু প্রতিপক্ষের পায়ে তা প্রতিহত হয়।

৮৩তম মিনিটে আবারও দোকু নৈপুণ্য। দুজনকে এড়িয়ে জায়গা বানিয়ে দূর থেকে জোরালো শট নেন তিনি, কিন্তু ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে যায় বল। বাকি সময়েও চাপ ধরে রেখে চেষ্টা করে যায় তারা; কিন্তু সাফল্য আর মেলেনি।

টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিযোগিতাটির কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায় নিল বেলজিয়াম। দেশটির পাঁচ বছর আগের ওই দল নিয়েও প্রত্যাশা ছিল ঢের; গত তিন বছর ধরে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান ধরে রাখা দলটিকে নিয়ে এবার তা আরও বেড়েছিল। দেশটির ফুটবল ইতিহাসে দলটিকে বলা হয় সোনালী প্রজন্ম, যাদের একটা শিরোপার অপেক্ষা আর শেষ হচ্ছে না।

মানচিনির ছোঁয়ায় পাল্টে যাওয়া ইতালির সামর্থ্য নিয়ে যাদের সংশয় ছিল, তা নিশ্চয়ই এবার শেষ হয়েছে। হারের স্বাদ ভুলতে বসা দলটির পরবর্তী মিশন ওয়েম্বলির সেমি-ফাইনাল। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন; দিনের প্রথম ম্যাচে যারা টাইব্রেকারে হারিয়েছে সুইজারল্যান্ডকে।