ভারতীয় বিমানবাহিনীর অফিসারদের একটি পার্টিতে এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন এক নারী। সেই নারীই এবার অভিযোগ তুলেছেন, অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত হতে তাকে ‘টু ফিঙ্গার টেস্টে’র মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে; যা দেশে নিষিদ্ধ।

ওই নারীর এই টু ফিঙ্গার টেস্টের অভিযোগটি আবার মানতে রাজি না ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বিবেক রাম চৌধুরী। ভয়েস অব আমেরিকা তাদের খবরে বলছে, বিবেক রাম চৌধুরী বলেছেন, কোনো টু ফিঙ্গার টেস্ট হয়নি। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা রক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্যাতনের শিকার নারী আরও অভিযোগ করেছেন তাকে তার যৌন সম্পর্কের ইতিহাস নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে।

বিমানবাহিনী প্রধান আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনায় বিমানবাহিনীর আইন খুবই কঠোর। নারী অফিসারের টু ফিঙ্গার টেস্ট করানোর ভুল খবর বেরিয়েছে। কোনো টু ফিঙ্গার টেস্টই হয়নি। আমরা নিয়মবিধির ব্যাপারে পুরোপুরি সচেতন। যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অফিসারের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের এই অভিযোগের তদন্তভার বিমানবাহিনীর হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণে অভিযুক্ত ২৯ বছর বয়সী ফ্লাইট লেফটেন্যান্টের বিচার হবে কোট মার্শাল আইনে, তা জানিয়েছে তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাত্তুরের আদালত। অভিযুক্তকে ইতোমধ্যে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে ভারতের মহিলা কমিশন এক বিবৃতিতে বলছে, বিমানবাহিনীর একজন নারী অফিসারের তোলা অভিযোগের বিষয়ে তারা ভারতীয় বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা ভারতীয় বিমানবাহিনী ডাক্তারদের আচরণে অত্যন্ত হতাশ, ক্ষুব্ধ, কেননা তারা নির্যাতিতার টু ফিঙ্গার টেস্ট করিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন, নির্যাতিতার সম্মান, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারেও হস্তক্ষেপ করেছেন।

প্রশিক্ষণ নিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর কলেজে যাওয়া ওই নারী অফিসার অভিযোগ করেছিলেন, ৯ সেপ্টেম্বর রাতে অফিসারদের মেসে পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন। মাদকাসক্ত হয়ে ভোরে তার ওপরে চড়াও হন অভিযুক্ত। তখন পায়ে চোট থাকায় ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন তিনি। ঘুম ভেঙে জেগে ওঠার পর তিনি আবিষ্কার করেন, তাকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষের নেওয়া পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তিনি বাধ্য হয়ে থানায় যান। ওই নারীর দাবি, বিমানবাহিনীতে দু’বার তাকে অভিযোগপত্র তুলে নিতে চাপ দিয়ে বাধ্য করা হয়। আরেকবার তাকে বয়ান বদল করা একটি চিঠিতে সই করতে বলা হয়, কিন্তু তিনি রাজি হননি। ২০ সেপ্টেম্বর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী অফিসার। ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত অমিতেশ হরমুখকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নির্যাতিতার অভিযোগ, ধর্ষণ প্রমাণের জন্য ‘টু ফিঙ্গার টেস্টে’র কথা বলা হয় ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাসপাতালে। পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেন বাহিনীর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এতে সংবাদমাধ্যমে বিমানবাহিনীর বদনাম হবে বলে জানানো হয় তাকে। এর পরই মূলত পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ওই নারী।

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে বিমানবাহিনী পিটিশন দাখিল করে জানিয়েছে, অফিসারকে গ্রেফতার করার অধিকার স্থানীয় পুলিশের নেই। সেনা আদালতে তার বিচার করা যাবে। অভিযুক্তকে বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হোক।

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা, ওয়ান ইন্ডিয়া ও জি ২৪।