মাঘের শীত কমতেই বাতাসে এসেছে ফাগুন। সব বয়সী মানুষের মনে ছুঁয়ে গেছে উৎসবের রঙ। প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। গাছে গাছে ফুটেছে ফুল। যেখানে মৌমাছি-প্রজাপতি খেলা করে বেড়াচ্ছে। বসন্ত বরণে প্রস্তুত সবকিছু। বাহারি ফুলের মেলায় রঙিন বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত যশোরের গদখালী বাজার। এরই মধ্যে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এই বাজারে ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। লক্ষ্য এখন ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারায় ফেব্রুয়ারি মাস ধরেই চলছে ফুল উৎসব। মাঠ পেরিয়ে স্থানীয় বাজার, বাজার থেকে রাজধানীতে যাচ্ছে ফুল। করোনাকালে ফুলের যে মন্দাভাব ছিল, এই মাসের বিকিকিনিতে অনেকখানি পুষিয়ে নিয়েছেন চাষিরা। তাদের ভাষ্যমতে, ফুল বেচাকেনা এভাবে চললে ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত ঘিরে গদখালী ও পানিসারা বাজার এলাকা মানুষের পদভারে মুখরিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন সেখানে ভিড় করছেন। ফুলের এই রাজধানীতে এবছর নতুন সংযোজন হয়েছে টিউলিপ আর লিলিয়াম। নিজ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত এই ফুল মানুষের ভালবাসায় রঙিন হয়ে উঠেছে।

গতকাল রবিবার সকালে পানিসারা এলাকায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ফুলের দোকান ও বাগানে তরুণ-তরুণীর ভিড়। দোকানে রাখা ফুলের মালা যে যার পছন্দমতো কিনছেন। প্রতিটি মালার দাম ফুলভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়তি হলেও সেদিকে নজর নেই ফুলপ্রেমীদের। বরং ভালোবাসার মানুষটিকে খুশি করাই সবার লক্ষ্য।

পানিসারা মোড়ের ফুল ব্যবসায়ী মো. তারেক রহমান বলেন, প্রায় দুই লাখ টাকার ফুল রয়েছে দোকানে। বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে সব ধরনের ফুল রেখেছি দোকানে। প্রচুর ক্রেতা আসছেন। বেচাকেনা জমে উঠেছে। সব ফুল বিক্রি হবে।

একই স্থানের আরেক ফুল ব্যবসায়ী সুমন আহমেদ বলেন, গতবারের চেয়ে এবার একটু বেশি ফুল দোকানে রেখেছি। সাধারণত যুগলরাই বেশি আসছেন। অনেকেই পরিবার নিয়ে আসছেন। যে যার পছন্দমতো ফুল কিনছেন। তবে অন্যান্য ফুলের তুলনায় গোলাপের দাম বেশি। আমরা প্রতি পিস ২০ টাকা বিক্রি করছি। ভালোবাসা দিবসে ৬০ হাজার টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট রয়েছে আমার।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মূলত আমাদের এখানকার ফুলের বাজার জমজমাট। ভালোবাসা দিবস ঘিরে রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। বিক্রির এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

রবিবার গদখালী বাজারে গোলাপ (সাধারণ) ১০০ পিস বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা, চায়না গোলাপ তিন হাজার টাকা, রজনীগন্ধা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৬০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, জারবেরা এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা, এক হাজার গাঁদা ফুল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফুলের এই চড়া দামে খুশি চাষি ও ব্যবসায়ীরা।