বাংলাদেশের ধনিয়া বীজ নাসার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে জাপানের KIBO মডিউলে ছয় মাস অবস্থান করে ফিরে এসেছে পৃথিবীর বুকে। কী হবে ফিরে আসা এসব বীজের? তা জানাতেই এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি-এনআইবি।

বুধবার সাভারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির সেমিনার কক্ষে এশিয়ান হার্বস ইন স্পেস শীর্ষক মহাকাশ জীববিজ্ঞান গবেষণায় এনআইবির মাধ্যমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানানোর উদ্দেশ্যে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এনআইবির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ বলেন, মালয়েশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ডসহ ১২টি দেশ এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছে। বাংলাদেশ জীবপ্রযুক্তি গবেষণায় বিশ্বমানে উন্নীত হবে বলে আশা করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA) এবং জাপানি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সার (JAXA) যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পরিচালিত এশিয়ান হার্বস ইন স্পেস প্রকল্পটিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীতে এনআইবির গবেষণাগারে এ সংক্রান্ত গবেষণার সুযোগ নিঃসন্দেহে এনআইবির চলমান গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।

মহাকাশে পাঠানোর সময় ঠিক একই রকম ধনিয়া বীজের কন্ট্রোল নমুনা সংরক্ষণ করা হয় এনআইবির গবেষণাগারে। মহাকাশ ঘুরে আসা ধনিয়া বীজের সঙ্গে কন্ট্রোল ধনিয়া বীজের তুলনামূলক সব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত থেকে আমরা বুঝতে পারব এসব বীজে কোনো ধরনের ফিজিওলজিক্যাল এবং মলিকুলার পরিবর্তন হয়েছে কিনা।

এসব তথ্য পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব, বিস্তার এবং ভবিষ্যতে মহাকাশেও ফসল ফলানোর সম্ভাবনার পাশাপাশি না জানা অনেক প্রশ্নের উত্তর এনে দিতে পারে।

মহাকাশ জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত এ গবেষণায় দেশের নবীন শিক্ষার্থীদেরও যুক্ত করা হবে। এ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী এবং গবেষকগণ ভবিষ্যতে মহাকাশ জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণায় প্রভুত অবদান রাখতে পারবে বলে মন্তব্য করেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কেশব চন্দ্র দাস।

মহাকাশ জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত এ গবেষণায় NASA এবং JAXA এর সঙ্গে বাংলাদেশ হতে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) স্পেস সিস্টেম ল্যাবরেটরির প্রকৌশলী মিজানুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, স্বল্প যায়গায় স্বল্প পরিবেশের জন্য ধনিয়াকেই বেছে নিয়েছি। ধনিয়া অল্প জায়গাতেই প্রচুর পরিমাণে জন্মাতে পারে।

গবেষণা কার্যক্রমটি এনআইবির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কেশব চন্দ্র দাস এবং ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোছা. মুসলিমা খাতুন কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ বলেন, ৭ মার্চ স্পেস স্টেশনে পৌঁছায়। পৃথিবীতে ফিরে আসলেও এখনো বাংলাদেশের হাতে এসে পৌঁছেনি। আমেরিকার নাসার পর জাপানের জাক্সা হয়ে এটি বাংলাদেশে পৌঁছবে। হাইড্রোফোনিক পদ্ধতিতে, আর্টিফিসিয়াল সানলাইট এবং টেম্পারেচর কন্ট্রোল করে স্পেসে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়েছে। প্রকল্পে বাড়তি কোনো খরচ করছি না। অন্য কাজের মাঝেই আমরা ধনিয়া নিয়ে কাজ করতে পারছি। শিশুদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য স্কুলে কিছু বীজ প্রেরণ করা হবে। যাতে তারা এটা মাটিতে চাষ করে দেখতে পারে। এতে তাদের মধ্যে বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহ জন্মাবে।