অনুদান নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে অংশীদার হওয়ার সামর্থ্য ও সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে চীন, ভারত, ইউরোপ ও জাপানের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে স্থানীয় সময় শুক্রবার বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে রোড শোতে বক্তারা এসব কথা বলেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রোডশোর মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়াল অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসনীম এ খান, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন জটিলতা নিরসন হলে তারা ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগে প্রস্তুত। এ সময় বিমানবন্দরে অনিবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) জন্য আলাদা গেট দাবি করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্থিতিশীল বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ লাভজনক।
বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা তুলে ধরে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগ আকর্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের ৪টি শহরে ১০ দিনের রোডশোর আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে রোডশো শেষ হয়েছে। সোমবার সানফ্রানসিসকোতে অনুষ্ঠিত হবে এই কর্মসূচি। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর আয়োজন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার। আমরা দেশটির সহায়তা নয়, বিনিয়োগ চাই। তিনি বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি একেবারে সহজ। তিনি বলেন, প্রবাসীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত। এ ব্যাপারে সব ধরনের জটিলতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে এনআরবি গেটের ব্যাপারে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শিল্প খাত মাথায় রেখে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিল্প খাতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শিল্প খাত সেবা গ্রাহকের দুয়ারে পৌঁছে গেছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। একই পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ এর পূর্বাভাস অনুসারে করোনার মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটিই তরুণ। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।