যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি ইউনিভার্সিটি যাত্রা শুরু করেছে। ভার্জিনিয়ায় “ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি” নামের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শনিবার এ উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। করোনা মহামারীর কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিও পরিণত হয় আনন্দকেন্দ্রে।

ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপের মালিকানাধীন ‘ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির ইতিহাসে আরেকটি অধ্যায়ের সংযোজন ঘটলো যুক্তরাষ্ট্রের এই ইউনিভার্সিটি চালুর মধ্য দিয়ে”। বহুজাতিক এ সমাজে কেবল প্রবাসীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেই নয়;  বাংলাদেশের মেধাবিদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখবে বলে নিজের আশার কথাও জানান তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যত বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরি পাবে, তত বেশি অর্থ যাবে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশিদের স্বপ্ন সারথি হোক এই ইউনিভার্সিটি।

ইউভার্সিটির মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, পরিচালকমন্ডলি, শিক্ষার্থী ছাড়াও অতিথি হিসেবে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত  এম শহীদুল ইসলাম, সামিট গ্রেুপের ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদ খান, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার।ভিডিওতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের   সদস্য   ড. সাজ্জাদ হোসেন, জর্জিয়া স্টেট সিনেটর শেখ রহমান এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ।

স্বাগত বক্তব্যে এই ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি, কারিগরি শিক্ষাও দেয়া হবে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে।  যেনো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার সাথে সাথেই সবাই চাকরি পেয়ে যান।” যুক্তরাষ্ট্রে অসংখ্য শিক্ষার্থী ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেও মাসের পর মাস চাকরি পান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অনেক দফতরেই পূর্ব অভিজ্ঞতা লাগে। অভিজ্ঞতা না থাকলে আইটি সেক্টরে কখনোই চাকরি পাওয়া যায় না। এই ইউনিভার্সিটিতে সে ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।”

তিনি জানান, এই ইউনিভার্সিটিতে তথ্য-প্রযুক্তি, ব্যবসা-প্রশাসন, প্রজেক্ট এবং হেলথ কেয়ার পড়ানো হয়। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনিভার্সিটির মালিকানা বদল হয়ে এসেছে, তাদের হাতে। এখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যাতে অবাধে ভর্তির সুযোগ পান সে চেষ্টা থাকবে বলেও জানান তিনি।

এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রী  ড. মোমেনের নামে দুটি স্কলারশিপ ঘোষণা দেয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীর মধ্য থেকে এই স্কলারশিপ একটি ব্যাচেলর এবং আরেকটি মাস্টার্স কোর্সের জন্য পাবেন। এর বাইরেও প্রায় দুই লাখ ডলারের শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হবে বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদেরকে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে ইউনিভার্সিটি পরিচালনা পর্ষদের চীফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার ফারহানা হানিপ বলেন, “গত দেড় দশকেরও বেশি সময়ে ‘পিপল এন টেক’র মাধ্যমে আমরা সংক্ষিপ্ত কোর্স দিয়ে আমেরিকায় আইটি সেক্টরে সাত হাজারেরও বেশি প্রবাসীকে উচ্চ বেতনে চাকরির পথ সুগম করে দিয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় ইউনিভার্সিটিকে অনেকটাই এগিয়ে নেয়া হবে।

রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরাও যাতে এই প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের মাধ্যমে ভালো ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারে, সেই প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

এরপর করতালির মধ্য দিয়ে কেক ও ফিতা কেটে ইউনিভার্সিটির উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।