দুনিয়াজুড়ে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনীতিকদের ফোনে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারির ঘটনা নতুন নয়। তবে ভারতে মন্ত্রী-সাংবাদিকসহ তিন শতাধিক ব্যক্তির ফোনে হ্যাকিংয়ের বিষয়টি ফাঁস হলে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের নজরদারির সফটওয়্যার পেগাসাস স্পাইওয়্যার। প্রশ্ন উঠছে কিভাবে কাজ করে এটি? সাধারণত কারা আক্রান্ত হয়? সাধারণ মানুষই বা কতটা সুরক্ষিত?
এটি ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-র তৈরি সফটওয়্যার, যা মোবাইলে আড়ি পাতার যন্ত্র হিসেবে কাজ করে। ফোনে কী কথাবার্তা হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপে কী আদান-প্রদান হচ্ছে সবই জানা যায়। ফোনে কী তথ্য, নথি, ছবি রয়েছে সেটাও দেখে ফেলা যায় এর মাধ্যমে। অথচ যার মোবাইল হ্যাক করা হয়েছে, তিনি জানতেই পারেন না। প্রথমে ফোনে একটি ওয়েবসাইটের লিংক পাঠানো হয়। তাতে ক্লিক করলেই মোবাইলে পেগাসাস ইনস্টল হয়ে যায়। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস কল বা ভিডিও কল করেও পেগাসাস ঢোকানো যায়।
২০১৯ সাল থেকে ১৬টি সংবাদমাধ্যম মিলে ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’ নামে একটি তদন্ত করেছিল। রবিবার সেই রিপোর্টের কিছু অংশ সামনে এসেছে। এদিন মূলত ভারতে তিন শতাধিক ফোন হ্যাকের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে দেশটির দুই জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তিন জন বিরোধী নেতা-নেত্রী, একজন সাংবিধানিক পদাধিকারী, ৪০ জনেরও বেশি সাংবাদিক, বহু ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, নিরাপত্তা সংস্থার বর্তমান ও সাবেক প্রধান, সমাজকর্মী, আমলা ও আইনজীবীদের ব্যবহৃত মোবাইলকে নজরদারির টার্গেট করা হয়েছে।
২০১৯-এর অক্টোবরে ফেসবুকের মালিকানাধীন সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, চারটি মহাদেশের প্রায় ১৪০০ জনের মোবাইল পেগাসাসের মাধ্যমে হ্যাক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ দেশটির একদল রাজনীতিক, সমাজকর্মী, আইনজীবী ও সাংবাদিক। ২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ দাবি করে, মে ও সেপ্টেম্বর মাসে তারা ভারত সরকারকে জানিয়েছিল, ভারতে ২০ জনের বেশি মানুষের মোবাইল হ্যাক হয়েছে। এছাড়া ১২১ জনের মোবাইলে স্পাইওয়্যার হামলা হয়েছে।
ইসরায়েলি সংস্থা এনএসও-র দাবি, নিরাপত্তার জন্য নজরদারি চালানোর প্রযুক্তি তৈরি করাই তাদের কাজ। তবে তারা শুধু বিভিন্ন দেশের সরকার, সরকারি নিরাপত্তা সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এই পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করে থাকে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানসহ ১৬টি সংবাদপত্রের অনুসন্ধানে পেগাসাসের নতুন কেলেঙ্কারি সামনে আসে। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের ‘কর্তৃত্ববাদী’ সরকারগুলো এনএসও গ্রুপ থেকে এই স্পাইওয়্যার কিনে নিজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিরোধী রাজনীতিক ও ভিন্নমতের মানুষদের ওপর ওপর নজরদারি করে থাকে। এনএসও গ্রুপ-ও বলছে, শুধু সরকারি ক্রেতাদের কাছেই এই ফোন হ্যাকিং সফটওয়্যার বিক্রি করা হয়। তবে মোদি সরকারের দাবি, ভারতের সরকারি এজেন্সিগুলোর তরফে ‘কোনও অনুমোদনহীন নজরদারি’ চালানো হয়নি। সরকারের বিরুদ্ধে হ্যাকিংয়ের যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটিই বরং ভিত্তিহীন।