মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান (দাদাভাই) মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। শুক্রবার (৯ জুন) দুপুর ২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

দুপুর আড়াইটার দিকে চিকিৎসকরা সিরাজুল আলম খানকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮২ বছর। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে সিরাজুল আলম খানকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এর আগে গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়।

সিরাজুল আলম খান উচ্চ রক্তচাপসহ আরও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। শারীরিক জটিলতার কারণে গত বৃহস্পতিবার তাকে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সিরাজুল আলম খানকে ‘রহস্য পুরুষ’ আখ্যা দেওয়া হয়। ‘দাদাভাই’ নামেও তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত।

সিরাজুল আলম খানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমি সিরাজুল আলম খান: একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য’ থেকে জানা যায়, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তিনি এবং তার গড়ে তোলা ‘নিউক্লিয়াস’ ভূমিকা রেখেছিল। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজনও ছিলেন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আবদুর রব বলেন, পতাকা তৈরির উদ্যোক্তা, ২ মার্চ পতকা উত্তোলনের উদ্যোক্তা, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার বা স্বাধীনতার ঘোষণার উদ্যোক্তা, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বঙ্গবন্ধু উপাধি যে মানুষটি পরিকল্পনা করেছেন তার নাম হচ্ছে সিরাজুল আলম খান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরবর্তীতে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জেরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। জাসদের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন রব।

সিরাজুল আলম খান কখনোই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।