পুলিশ বাহিনীতে কেউ শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

আজ মঙ্গলবার তিন দিনব্যাপী অপরাধ পর্যালোচনা সভার (ক্রাইম কনফারেন্স) শেষ দিনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, ‘একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে পুলিশ বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দেশের জনগণের ক্ষতি হয়।’

আইজিপি বলেন, ‘বাহিনীর শৃঙ্খলা ও কল্যাণ এক বিষয় নয়। শৃঙ্খলাকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে কোনো ধরনের আপোষ করা যাবে না। কোনো পুলিশ সদস্য শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতেও আমরা যথেষ্ট সচেষ্ট রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘জুনিয়রদের কাজকর্ম তদারক করতে হবে। তাদেরকে পুলিশ বাহিনীর একজন যোগ্য সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব সিনিয়র সহকর্মীদের পালন করতে হবে।’

আইজিপি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনায় আমরা দেশ ও জনগণের কল্যাণে দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের মাদকের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লেষ থাকতে পারবে না। কারও যদি মাদকের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লেষ থাকে তাহলে তাকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্যের মাদক গ্রহণ, মাদক ব্যবসা বা মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কনস্টেবল নিয়োগের বিষয়ে আইজিপি বলেন, ‌‌‘নতুন নীতিমালায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ করা হচ্ছে। কনস্টেবল নিয়োগ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আমরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ ও উন্নত অনেক দেশের নিয়োগ নীতিমালা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ পুলিশের উপযোগী কনস্টেবল নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। এর ফলে আমরা কনস্টেবল পদে মেধা ও শারীরিক দিক থেকে অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন পুলিশ সদস্য নিয়োগে সক্ষম হবো। অচিরেই পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট পদেও নতুন নীতিমালা অনুযায়ী লোক নিয়োগ করা হবে।’

পুলিশ প্রধান বলেন, ‘পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী কৌশল ব্যবহার করতে হবে। পুলিশে বেস্ট প্র্যাকটিসের চর্চা বাড়াতে হবে। আমরা যেখানেই কাজ করি না কেন, আমাদেরকে পদচিহ্ন রেখে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যাতে মানুষ আমাদেরকে স্মরণ করে, মনে রাখে।’

তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি আচরণ বদলানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মানুষের প্রতি অমানবিক আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো। আর এটা এখুনি করা যায়। এতে সময় ও আর্থিক বিনিয়োগ কোনোটারই প্রয়োজন হয় না।’

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রজেক্টে অনেক বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। তাদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, ‘শুধু চাকরি করলে হবে না। চাকরিতে প্রাইড নিয়ে আসতে হবে। এজন্য মানসিকতা ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে হবে। চাকরির প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে, তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব।’

তিনি সংগঠনকে বটবৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করে বলেন সংগঠন যত বড় হবে, ‘তত এর শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। দেশ ও দেশের জনগণ উন্নত সেবা পাবে। দেশের জন্য, দেশের সাধারণ জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।’