আজ ১৮ অক্টোবর সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে ‘বঙ্গবন্ধু ভবনে’ শেখ রাসেল জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার ঘৃণ্য শত্রু-খুনি-ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নরপিশাচরা নিষ্ঠুরভাবে শিশু রাসেলকেও হত্যা করেছিল। মৃত্যুকালে তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা তাকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তাদের সেই অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। শহীদ শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের কাছে ভালোবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম-গঞ্জ-শহর তথা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ-লোকালয়ে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক সত্তায় পরিণত হয়েছেন। মানবিক চেতনাসম্পন্ন সব মানুষ শেখ রাসেলের মর্মান্তিক বিয়োগ বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফোটাতে আজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত সব শহীদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এদিকে, ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মতো জাতীয় দিবস হিসেবে দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হবে ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং শিক্ষা, শিল্পকলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১০টি ‘শেখ রাসেল স্বর্ণপদক’, শেখ রাসেল পদকপ্রাপ্ত ও অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ২০টি ল্যাপটপ, এলইডিপির আওতায় মূল অনুষ্ঠানে পাঁচটি এবং বিভিন্ন জেলায় ৩ হাজার ৯৯৫টিসহ মোট ৪ হাজারটি ল্যাপটপ দেওয়া হবে।
এছাড়া শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ ৬০টি পুরস্কার বিতরণ করবে। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে।
এছাড়া আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির যৌথ উদ্যোগে ১৮ অক্টোবর সকাল ৬টায় বনানী কবরস্থানে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ৭টায় সরকারের মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে।
সকাল সাড়ে ৯টায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) হল অব ফেম-এ শেখ রাসেল দিবসের উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন।
দিবসটি উপলক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, হল অব ফেম-এ বিকাল ৩টায় ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। একই মিলনায়তনে ‘কনসার্ট ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়ক পুস্তক প্রদর্শিত হবে।
সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে’ পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন, দুপুর ১২টায় শিশু অ্যাকাডেমি অডিটোরিয়ামে শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে শিশু অ্যাকাডেমির মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, দুপুর ২টায় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ রাসেল’ গ্যালারিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ নিজস্ব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল দিবস পালনের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।
এ উপলক্ষে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শেখ রাসেল বুক কর্নার’ স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। চলতি মাসের মধ্যেই দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই কর্নার করা হবে।