সাবাস বাংলাদেশ। এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। বিশ্ব দরবারে এক সময়ের তথাকথিত তলাবিহীন ঝুড়ি বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। নিজেদের অর্থনৈতিক, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি বন্ধুপ্রতীম দেশ শ্রীলঙ্কার দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। দেশটিকে প্রথমবারের মত ঋণ দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত ঋণের একটি অংশ ইতিমধ্যে ছাড় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে থাকা সার্কভূক্ত দেশ শ্রীলঙ্কাকে প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ৫ কোটি ডলার ছাড় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪২৫ কোটি টাকা। এই ছাড়ের মাধ্যমে প্রথম কোনও দেশকে ঋণ দিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাধীনে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কার অনুকূলে অর্থ ছাড়ের পর বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ৬৫৮ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রীলঙ্কাকে প্রথম দফায় ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে। প্রতিশ্রুত ঋণের বাকি অংশ দেশটির চাহিদা বিবেচনায় ছাড় করা হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় কারেন্সি সোয়াপ সুবিধার আওতায় তিন মাস মেয়াদে ৫ কোটি ডলার ছাড় দেওয়া হলো। এক্ষেত্রে লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট বা লাইবরের সঙ্গে দেড় শতাংশ যোগ করে সুদ পাবে বাংলাদেশ। তিন মাসের জন্য অর্থ দেওয়া হলেও এর মেয়াদ বাড়তে পারে। শ্রীলঙ্কার আবেদনের ভিত্তিতে গত মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তাদের ঋণ দেওয়ার নীতিগত অনুমোদন হয়। এরপর চুক্তিনামা তৈরিসহ কিছু প্রক্রিয়া শেষে ঋণ ছাড় করা হলো।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সোয়াপের ক্ষেত্রে দেশটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো একটি অ্যাকাউন্টে সমপরিমাণ নিজস্ব মুদ্রা রেখে ডলার নেবে। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার সরকার ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি থাকবে। পরবর্তীতে সুদসহ শ্রীলঙ্কা ডলার ফেরত দেওয়ার পর বাংলাদেশ তাদের মুদ্রা ফেরত দেবে। দেশের মধ্যেও এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের সঙ্গে সোয়াপ করে। সাধারণভাবে টাকা ও ডলারের সোয়াপ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোনও ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সাময়িক সঙ্কটে পড়লে টাকা রেখে স্বল্প সময়ের জন্য ডলার নেয়। ওই ব্যাংকের হাতে ডলার এলে নির্ধারিত সুদসহ আবার তা পরিশোধ করতে হয়। তখন জমা টাকা ফেরত পায় ব্যাংকটি।
অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে শ্রীলঙ্কা বহুকাল ধরেই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্ধুরাষ্ট্র। বিভিন্ন সময়ে উভয় দেশ একে অপরের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় সঙ্গী হয়েছে অতীতে। বর্তমানেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাংলাদেশ সফর এ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উচ্চতাকে আরো বৃদ্ধি করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আগমন একদিকে বাংলাদেশকে যেমন সম্মানিত করেছে, অন্যদিকে বাণিজ্য সম্প্রসারণের নতুন সম্ভাবনাও উন্মোচন করেছে। উভয় দেশের মধ্যে এ সময় বিভিন্ন রকম বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা থেকে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ উভয় দেশই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী ‘মুজিব চিরন্তন’ শিরোনামের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে শ্রীলঙ্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনাব মাহিন্দা রাজাপক্ষে গত ১৯ মার্চ, ২০২১ রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছেন বাংলাদেশে। করোনাকালীন এ সংকটময় সময়েও বাংলাদেশের আমন্ত্রণে এদেশে এসেছেন তিনি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মতো আনন্দঘন আয়োজনে তাকে পেয়ে বাংলাদেশ সত্যিই সম্মানিত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে আগত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীগণও উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীগণ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উভয় দেশের মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। কৃষি, যুব উন্নয়ন ও কারিগরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারে স্বাক্ষরিত হয়েছে এ ছয়টি সমঝোতা স্মারক।