সরকারের চেয়ে হত্যাকারীরা শক্তিশালী, এটা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত ৮৫ বার পেছানো হয়েছে। তদন্তের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি কী করছেন, সেটা আমরা জানি না। প্রতি বছর আমাদের এই দিবস পালন করতে লজ্জা হয়। আমরা আর এই দিবসটি পালন করতে চাই না। আমরা আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি আসার আগেই সাগর-রুনি হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ডিআরইউ।

সভায় ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, আমরা আগেও প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি, তাতেও কোনো কাজ হয়নি। আমাদের দাবি ও স্মারকলিপি এবার রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবারও দেবো। আমরা তাদের একটি ডেডলাইন দিতে বলব, আসলে কত দিনের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে সাংবাদিক সংগঠনগুলো আছে তারা আজ অন্তত একটা কর্মসূচি দিতে পারতো। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রাণের তাগিদেই এই কর্মসূচিগুলো একের পর এক দিয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু সাগর-রুনির ক্ষেত্রে না, অন্য যেকোনো সাংবাদিকের ক্ষেত্রে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কথা বলে।

ডিআরইউয়ের এই সভাপতি বলেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে যাদের কথা বলার কথা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, তারা মিউ মিউ করে কথা বলে। আজ তারা কেন কোনো কর্মসূচি দিল না। আমি বলতে চাই, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ভবিষ্যতে আমরা যে কার্যক্রম গ্রহণ করব তার সাথে একত্রিত হয়ে মাঠে থাকবে এবং সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ যত সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার সবগুলো বিচারের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার থাকবে। এছাড়া আমাদের এডিটরদের অনেকগুলো ফোরাম রয়েছে, তারা কি সব সময় নীরব থাকবে? আমরা তাদের আহ্বান জানাব, আমাদের সাথে যুক্ত হতে না পারেন, অন্তত সংহতি প্রকাশ করুন।

তিনি আরও বলেন, আমরা সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সোচ্চার আছি এবং সোচ্চার থাকব এবং আমরা সুনিশ্চিত যে একদিন এই বিচার পাব। আমরা হতাশ হতে চাই না, আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করবে।

মাছরাঙা টেলিভিশনের চিফ নিউজ এডিটর রাশেদ আহমেদ বলেন, আমরা আশা ছাড়তে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি রাষ্ট্র এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে।

সমাবেশে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, সাংবাদিক পেশার দুজন মানুষকে এক দশক আগে হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যাকারীদের প্রশাসন এখনও গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ জানাচ্ছি। আদালত যদি এ বিচারের দিকে সুদৃষ্টি দেয় তবে সারা দেশের মানুষের প্রত্যাশার এ বিচার দ্রুত শেষ হবে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলাম খান তপু বলেন, ২০১২ সালের এ দিনে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি খুন হন। ওই বছর আমাদের প্রতিবাদের বছর ছিল। সারা দেশে দলমত নির্বিশেষে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল সেটির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এ ডিআরইউ। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা সেই বিচার পাইনি। দফায় দফায় তদন্ত প্রতিবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে ৮৫ বার। হয়তো কয়েক দিন পরে সেটা ১০০ পার হয়ে যাবে। সেটা না করে দ্রুত আমরা বিচার চাই।

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব শেখ মামুন বলেন, সবাই বলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিতা করার কথা…সাগর-রুনির হত্যার ঘটনা নানাভাবে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। সেই সময়ের নেতৃবৃন্দ কে কোথায় সুবিধা নিয়েছেন… আরে অনুসন্ধান তো হওয়ার কথা নিজের ঘর থেকে। আমরা ভোট আসলে নেতা হই, প্রাথী হই, নানা ধরনের প্রতিশ্রুতির বন্যায় আপ্লুত হই। ভোট শেষ হওয়ার পর সব শেষ। সাগর-রুনি হত্যা, মানিক সাহা, বালু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। কেন হয়নি, এ প্রশ্নের জবাব রাষ্ট্রের কাছে চাই।